মানিকগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
আমাদের জানা মতে প্রত্যেকটি জেলায় কিছু না কিছু বিখ্যাত রয়েছে কিন্তু কি? তা আমাদের সকলের অজানা। আজকে আমরা জানবো মানিকগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
আমাদের অনেকের মনে কিছু প্রশ্ন জাগতে পারে মানিকগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত? আমরা জানি বাংলাদেশ এখনো ৬৪টি জেলায় রয়েছে তার মধ্যে এক অন্যতম জেলা হলো মানিকগঞ্জ জেলা । মানকিগঞ্জ জেলা বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা।
মানিকগঞ্জ জেলার আয়তন ১৩৭৮.৯৯ বর্গ কিঃ মিঃ হাজারী গুড় ও লোক সংগীতের জেলা হলো মানিকগঞ্জ জেলা। তাছাড়া দর্শনীয় স্থান, নামকরণ, ব্যক্তিবর্গ ও ইতিহাসের জন্যেও বিখ্যাত রয়েছে।
আজকে আর্টিক্যালটি পড়ে জানতে পারব মানিগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
এই জেলার উত্তরে টাঙ্গাইল উত্তর-পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ পশ্চিম-দক্ষিনে যমুনা নদী ও পদ্মা নদী আর পূর্ব দক্ষিনে রয়েছে ঢাকা জেলা। মানিকগঞ্জ মহকুমা নামে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৪৫ সালের মে মাসে। ফরিদপুর জেলার অধীন ছিল এই মহকুমা। পরবর্তীতে ১৮৫৬ সালে মানিকগঞ্জ মহকুমাকে ঢাকা জেলার অন্তর্ভূক্ত করা হয়।পরে ১৯৮৪ সালের ১ লা মার্চ মানিকগঞ্জ কে জেলায় রূপান্তর করা হয়।
মানিকগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলা খেজুর গুড় এর জন্য দেশ জুড়ে বিখ্যাত। এছাড়াও এই জেলার ইতিহাস ও দর্শনীয় স্থান এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্য মানিকগঞ্জ জেলা বিখ্যাত। নিচের বিস্তারিত মানিগঞ্জ জেলা ইতিহাস, দর্শনীয় স্থান এবং বিখ্যাত ব্যক্তিদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নামকরণের দিক থেকে মানিকগঞ্জ জেলা বিখ্যাত
মানিকগঞ্জ, নাম শুনলেই মানিক কথাটা মাথায় আসে। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী মানিকগঞ্জ জেলার ইতিহাসে প্রচলিক আছে যে, অলি আউলিয়ার পূণ্যভূমি ধামরাই থেকে জনৈক দরবেশের নির্দেশক্রমে অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে মানিক শাহ নামক এক সুফি দরবেশ সিংগাইর উপজেলার ‘মানিকনগর নামে একটি গ্রামে আগমন করেন ও সেখানে খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন।
পরবর্তীকালে তিনি এ খানকা ছেড়ে হরিরামপুর উপজেলায় দরবেশ হায়দার শেখ এর মাজারে গমন করেন এবং ইছামতির তীরবর্তী জনশূন্য চরাভূমি বর্তমান মানিকনগরে এসে খানকা প্রতিষ্ঠা করেন। এ খানকাকে কেন্দ্র করে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে। উক্ত জনবসতি মানিক শাহ’র পূণ্য স্মৃতি ধারণ করে হয়েছে ‘মানিকনগর।
মানিক শাহ শেষ জীবনে ধামরাইতে অবস্থিত আধ্যাত্মিক গুরুর দরবার শরিফে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পুনরায় দ্বিতীয় খানকা ছেড়ে ধলেশ্বরীর তীরে পৌঁছেন। জায়গাটির নৈসর্গিক দৃশ্য তাঁর পছন্দ হয়। তিনি এখানে খানকা স্থাপন করেন। প্রথম ও দ্বিতীয় খানকার ভক্তবৃন্দও এখানে এসে দীক্ষা নিত। মানিক শাহর অলৌকিক গুণবালীর জন্য জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলেই তাঁকে শ্রদ্ধা করতো। এমনকি দস্যু তষ্করগণও কোনো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে খানকার ধারে কাছে আসতো না। তাই ভক্তবৃন্দ ছাড়াও বণিকগণও এখানে বিশ্রাম নিতো এবং রাত্রি যাপন করতো।
সওদাগরী নৌকাগুলো নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে খানকার তীরে নোঙর ফেলে রাত্রি কাটাত। এভাবেই ধলেশ্বরীর তীরে মানিক শাহ’র খানকাকে কেন্দ্র করে জনবসিত মোকাম প্রতিষ্ঠিত হয়। মানিক শাহ এক রাতে সোনারগাঁওয়ের পথে উধাও হয়ে যান। মানিক শাহ চলে গেলেও তাঁর খানকা এবং তৎসংলগ্ন মোকাম বা গঞ্জ পরবর্তীকালে তাঁর নামানুসারেই “মানিকগঞ্জ” হয় বলে ধারণা করা হয়। উক্ত খানকা তৎ সংলগ্ন গঞ্জ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। তা সত্ত্বেও ১৮৪৫ সালে সম্ভবত এ সুফি দরবেশের নামানুসারেই মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ করা হয়ে থাকতে পারে।
মানিকগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান
বালিয়াটি জমিদার বাড়ি
মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় ৫ মাইল পূর্বে সাটুরিয়া উপজেলায় বিখ্যাত বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অবস্থিত। বালিয়াটি জমিদার বাড়ি মোট সাতটি স্থাপনা নিয়ে অবস্থিত।
১৬০০০ বর্গমিটার আয়তনের বিশাল এই জমিদারবাড়িটিতে প্রায় ২০০টি কক্ষ রয়েছে। উনিশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে আরম্ভ করে বিশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত প্রায় শতাধিক বছর বহুকীর্তি রেখে গেছেন। জমিদারবাড়ির পেছনে অবস্থিত পুকুরের এক প্রান্তে চারটি ঘাট আছে এবং অপর প্রান্তে বেশকিছু শৌচাগার রয়েছে। এটি বাংলাদেশের উনিশ শতকে নির্মিত অন্যতম একটি প্রাসাদ। একে বালিয়াটি জমিদার বাড়ি অথবা বালিয়াটি প্রাসাদ বলেও ডাকা হয়।
আরিচা ঘাট
আরিচা ঘাট বাংলাদেশের একটি অন্যতম নৌবন্দর। ১৯৬৪ সালে ঢাকা-আরিচা সড়ক চালু হওয়ার পর আরিচা থেকে যমুনা পাড় হয়ে নগরবাড়ী এবং আরিচা থেকে যমুনা-পদ্মা পাড় হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটের সঙ্গে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। মানিকগঞ্জ জেলার এক অন্যতম দর্শনীয় স্থান এবং এটা ইলিশ এর জন্যে প্রসিদ্ধ আরিচা ঘাট।
তেওতা জমিদার বাড়ি
মানিকগঞ্জ জেলার শিবালয় উপজেলায় অবস্থিত তেওতা জমিদার বাড়ি। বাংলাদেশের একটি প্রাচীন জমিদার বাড়ি ও প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। শিবালয় উপজেলার তেওতা নামক গ্রামে অবস্থিত। তেওতা জমিদার বাড়িটি মোট ৭.৩৮ একর জমি নিয়ে স্থাপিত।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিচিহ্ন। এ প্রাসাদেই কবি নজরুল, প্রমীলা দেবীর প্রেমে পড়েন । প্রমীলা দেবীর মূগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয়/সেকি মোর অপরাধ
ধানকোড়া জমিদার বাড়ি
জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলার ধানকোড়া নামক গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক ধানকোড়া জমিদার বাড়ি ।
এই জমিদার বংশধররা ভারতের দিল্লি থেকে বর্তমান বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়া উপজেলায় এসে বসতি স্থাপন করেন এবং জমিদারী প্রতিষ্ঠা করেন। এর পর দেশ ভাগাভাগির মধ্য দিয়ে জমিদারী প্রথা বিলুপ্ত হয়। জমিদার বাড়ির বংশধররা ১৯৫২ সালে বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান।
মানিকগঞ্জ জেলা বিখ্যাত ব্যক্তি
রফিকউদ্দিন আহমদ : রফিক সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক চর্চায় বিশেষভাবে উৎসাহী ছিলেন। রফিকউদ্দিন আহমদ হলে এক অন্যতম ভাষা শহীদ।
হারুনার রশীদ খান মুন্নু : হারুনার রশীদ খান মুন্নু ছিলেন এক অন্যতম নেতা। সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী। বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবক।
খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন : খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ছিলেন ভাষা সৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, সাবেক সংসদ সদস্য, চীফহুইপ এবং বিএনপির সাবেক মহাসচিব।
ড. অমর্ত্য সেন : অমর্ত্য সেন শুধু একজন প্রথা মাফিক অর্থনীতিবিদ নন, তিনি অর্থনীতির দার্শনিক ও বিবেক। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, দার্শনিক।
বিচারপতি এ কে এম নূরুল ইসলাম : বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম নূরুল ইসলাম।
হীরালাল সেন : বাংলার চলচ্চিত্র জগতের প্রবাদ পুরুষ হীরালাল সেন ।উপমহাদেশের চলচিত্রের জনক, চিত্রগ্রাহক।
খান আতাউর রহমান :খান আতাউর রহমান হলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংগীত পরিচালক, সুরকার, গায়ক, গীতিকার, প্রযোজক।
মাসুদ আলি খান : মাসুদ আলি খান মিানকগঞ্জ জেলার অন্যতম অভিনেতা।
মমতাজ বেগম : মমতাজ বেগম সংগীত শিল্পী ও সংসদ সদস্য।
ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন : ডঃ দীনেশচন্দ্র সেন হলেন শিক্ষাবিদ, গবেষক, লোক-সাহিত্যবিশারদ, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসকার। প্রাচীন পুঁথি সংগ্রাহক, সাহিত্যিক, গবেষক।
শামসুজ্জামান খান : সাবেক মহাপরিচালক, বাংলা একাডেমি।
বন্ধুরা আজকের আর্টিক্যাল পড়ে আপনারা জানতে পেরেছেন মানিকগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ? আসা করি আজকে আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।