পটুয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত
পটুয়াখালী আমাদের সকলের সুপরিচিত একটি জেলা। কেননা ভৌগোলিক অবস্থান এবং দর্শনীয় স্থানের কারণে পটুয়াখালী সারা বাংলাদেশ জুড়ে সমাদৃত।
পটুয়াখালী বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত বরিশাল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত “এ” ক্যাটাগরির জেলা। পটুয়াখালী বাংলাদেশের সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের জেলা। সমগ্র বাংলাদেশের ভেতরে পটুয়াখালীর বাসিন্দারা সর্বপ্রথম অসাধারন সূর্যোদয় উপভোগ করে।
মূলত আমাদের আজকের আর্টিকেল এর আলোচ্য বিষয়, পটুয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত এই সম্পর্কে। এছাড়া আরো জানবো পটুয়াখালীর ইতিহাস, ঐতিহ্য, দর্শনীয় স্থান,বিশেষ ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে।
পটুয়াখালী জেলার সম্পর্কে তথ্য
পটুয়াখালীর অবস্থার বাংলাদেশের একদম দক্ষিণে । পটুয়াখালী জেলার মোট আয়তন ১২৩২ বর্গমাইল। এবং জেলার মোট জনসংখ্যা ১৫৩৫৮৫৪ জন। অর্থাৎ প্রতি বর্গ কিলোমিটারে পটুয়াখালীতে ঘরে বসবাস করে ৪৮০ জন মানুষ। বাংলাদেশের জনসংখ্যার ঘনত্ব বিবেচনায় যা নেহাতই অনেক কম বলা চলে। পটুয়াখালী জেলায় সাক্ষরতার হার ৬৫%। বর্তমানে জনাব কামাল হোসেন পটুয়াখালী জেলার জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত।
পটুয়াখালী জেলার ইতিহাস
ঠিক কবে নাগাদ পটুয়াখালীতে জনবসতি গড়ে উঠেছিল সেই সম্পর্কে খুব একটা ধারণা পাওয়া যায় না। তবুও জনশ্রুতি রয়েছে আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে এখানে মানুষের বসতি ছিল। তৎকালীন সময়ে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কু-প্রথার কারণে নিম্নবর্গীয় মানুষজন এবং নারীরা নির্যাতনের শিকার হতে থাকে। এমনকি অনেককে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়।
সে কারণে ধীরে ধীরে মানুষ অন্যত্র চলে যায়। এবং এক পর্যায়ে পটুয়াখালী রিক্ত বিড়ান ভূমিতে পরিণত হয়। পরবর্তীতে ১৮০৮ সালে লর্ড মিস্টার বেন্ট ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বরিশাল এলে তিনি তার কার্যালয়ে পটুয়াখালী স্থানান্তর করেন। যার ফলে পটুয়াখালী ধীরে ধীরে প্রাধান্য পেতে শুরু করে। তিনি দীর্ঘকাল তার প্রশাসনিক ক্ষমতা বলে এখানে টিকে ছিলেন।
সেই সময় পটুয়াখালীতে একটি মহকুমায় পরিণত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৬৯ সালে পটুয়াখালী কে পূর্ব বাংলার একটি জেলায় হিসেবে গড়ে তোলা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ শে এপ্রিল পটুয়াখালী হানাদার বাহিনীর কবলে চলে আসে। ১৯৭১ সালের ৮ই ডিসেম্বর পটুয়াখালী শত্রু মুক্ত হয়। ১৯৯৩ সালের ৯ জানুয়ারি পটুয়াখালীকে বরিশাল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বৃহৎ পটুয়াখালী সহ আরো পাঁচটি জেলা নিয়ে গড়ে ওঠে বরিশাল বিভাগ।
পটুয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত?
পটুয়াখালী বিখ্যাত হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। তবে তার মধ্যে অন্যতম উল্লেখযোগ্য কারণ হলো: পটুয়াখালী সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের জেলা। এটা হয়তো আমরা সকলেই জানি যে জাপানকে সূর্যোদয়ের দেশ বলা হয়ে থাকে।
ঠিক তেমনি বাংলাদেশের সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তের জেলা পটুয়াখালী। পটুয়াখালীতে অবস্থিত সাগরকন্যা কুয়াকাটা। কুয়াকাটার সূর্যাস্ত এবং সূর্যোদয় উপভোগ করতে প্রতিবছর লক্ষাধিক পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। প্রাকৃতিক নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যে অনন্য পটুয়াখালী। সাগরকন্যা কুয়াকাটা তার সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করে দেয়।
পটুয়াখালী মিষ্টির জেলা হিসেবে পরিচিত। পটুয়াখালীর প্রত্যেকটি মিষ্টির দোকানে তৈরি করা হয় খাঁটি মহিষের দুধের দই। পটুয়াখালীর জেলার গ্রামেগঞ্জে গৃহপালিত পশু হিসেবে মহিষ পালন করা হয়। সে কারণে পটুয়াখালীতে মহিষের দুধ এবং ছানার বেশ চাহিদা রয়েছে।
পটুয়াখালীর বিখ্যাত ব্যক্তি বর্গ
পটুয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত সেই সম্পর্কিত জানা গেল এবার জেনে নেওয়া যাক পটুয়াখালীর বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সম্পর্কে।
মোহাম্মদ বাতেন প্রামানিক
তিনি পটুয়াখালী জেলার অন্যতম একজন সমাজ সংস্কারক এবং সমাজ সেবক। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি তার সমস্ত পরিবারকে হারিয়েছেন। প্রাণ বাঁচানোর দায়ে চলে যান ভারতে। দেশ স্বাধীন হলে ফিরে আসেন নিজ জন্মভূমিতে।
পরবর্তীতে তিনি ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করেন। এবং ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিসর বৃদ্ধি করতে থাকেন। তিনি অত্র এলাকার বিভিন্ন সামাজিক উন্নয়নের জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থ সম্পদ দান করেছেন।
হাবিবুল্লাহ শেখ
একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সাহসিকতার পরিচয় দেন। এছাড়াও অত্র এলাকার বিভিন্ন ক্রীড়া সংগঠন করে তোলার জন্য তিনি সমাদৃত।
নুরুল হক
নুরুল হক বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট জনপ্রিয় ছাত্রনেতা। ২০১৮ সালে কোটা আন্দোলনের সময় তিনি সকলের মাঝে আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন। সেই সময় তিনি ছিলেন ডাকসুর যুগ্ম সম্পাদক। ২০১৯ সালে তিনি ডাকসুর ভিপি হিসেবে নির্বাচিত হন।
তিনি ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ নামের একটি রাজনৈতিক দল করে তোলেন। এর পর্বে ২০১৮ সালের আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তিনি বিভিন্ন আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন।
ফয়েজ আহমেদ
ফয়স আহমেদ বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং রাজনীতিবিদ। ১৯৬১ সালে তিনি পটুয়াখালীর একটি শিক্ষানবিশ মুসলিম পরিবারের জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
পটুয়াখালীর বিখ্যাত খাবার
পটুয়াখালীর সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার হল মহিষের দুধের ছানা এবং দই। এই খাবারের জন্য পটুয়াখালী সমগ্র বাংলাদেশের ব্যাপকভাবে সমাদৃত।
তবে অথেন্টিক মহিষের দুধের দইয়ের জন্য পটুয়াখালীর গ্রাম গুলোতে খোঁজ করতে হবে।
এছাড়াও পটুয়াখালীতে বিভিন্ন ফলা-ফলাদি যেমন আম, কলা, কাঁঠাল,পেয়ারা,নারকেল,আনারস,পেঁপে ইত্যাদির ফলনের জন্য সুপরিচিত।
পটুয়াখালী দর্শনীয় স্থান
পটুয়াখালীর দর্শনীয় স্থান গুলির মধ্যে অন্যতম হলো:
কুয়াকাটা
সমুদ্রকন্যা কুয়াকাটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। শুধু দেশীয় পর্যটক নয় প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটক পটুয়াখালীর অসাধারণ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করার জন্য ছুটে আসেন।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় নয় বরং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দ্বারা পরিবেশিত অসাধারণ একটি দর্শনীয় স্থান।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ভিসি-লেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি মূল আকর্ষণ।
রাখাইন পল্লী
বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলায় কোন না কোন আদিবাসী বসবাস করে। পটুয়াখালীতে রয়েছে রাখাইন!
রাখাইন জনগোষ্ঠীর নিয়ে পটুয়াখালীতে একটি আলাদা পল্লী গড়ে উঠেছে যার নামকরণ করা হয়েছে রাখাইন পল্লী । রাখাইন পল্লীতে প্রবেশ করলে তাদের জীবনযাত্রা এবং অসাধারণ শৈল্পিক কলা চোখে পড়বে।
কমলার দীঘি
আমরা অনেকে হয়তো পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের লেখায় কমলার দিঘী নামটি শুনে থাকবো। জনশ্রুতি রয়েছে যে, রাজা পদ্মনাভের সময়কালে পানের উপযোগী সুপেয় পানির অভাব দেখা দিলে রাজা এই দিঘীটি খনন করেন ।
চারিদিকে নারিকেল গাছ ঘেরা দীঘিটি পটুয়াখালী অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
আমাদের আজকের আর্টিকেল এর মূল প্রতিপাদক বিষয় ছিল পটুয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত শেষ সম্পর্কে। আশা করি আর্টিকেলটির যাবতীয় তথ্যের মাধ্যমে আমাদের পাঠক উপকৃত হয়েছেন। যদি বিন্দুমাত্র উপকৃত হয়ে থাকেন তবে সেটি আমাদের অনেক বড় সার্থকতা। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।