বরিশাল কিসের জন্য বিখ্যাত
বরিশাল কিসের জন্য বিখ্যাত ? ইলিশের জন্য ? লঞ্চের জন্য ? শুধু একটি নিয়ামক দিয়েই কি দেশের অন্যতম এই বিভাগীয় জেলাকে মাপা যায়? বরিশাইল্যা ভাষা তো আমরা সবাই জানি ? কিন্তু কয়জনই বা আর জানি বরিশালের ইতিহাস , ঐতিহ্য এবং হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি সম্পর্কে জানে!
বরিশাল কিসের জন্য বিখ্যাত |
আর তাই আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করতে চলেছি দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম একটি জেলা বরিশাল নিয়ে !বরিশাল কিসের জন্য বিখ্যাত, বিশিষ্ট ব্যাক্তিবর্গ, দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে বিস্তারিত। আসা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
বরিশাল জেলার ইতিহাস
১৭৯৭ সালে অর্থাৎ ব্রিটিশ পিরিয়ডে, ব্রিটিশদের শাসন তথা শোষন ব্যবস্থাতে বেগবান করার লক্ষ্যে সমগ্র ভারত বর্ষকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছিলো। সেই সময় অত্র এলাকার নাম করণ করা হয় বাকের গঞ্জ। প্রভাবশালী জমিদার বাকেরের নাম অনুসারে এই এলাকার নামও রাখা হয় বাকের গঞ্জ। তখনকার সময় বাকেরগঞ্জ ছিলো প্রায় পুরো দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে বিস্তৃত। পরবর্তীতে ১৮০১ সালে স্যার জন শ্যোর বরিশালে তার কার্যালয় স্থানান্তর করেন।
বরিশাল জেলার নামকরণ
বরিশালের নামকরণ মূলত করা হয়েছে বরিসল্ট থেকে। ততকালিন সময় এই এলাকায় যে লবনগুলো পাওয়া যেতো,এগুলো ছিলো অনেক মোটা। ইংরেজরা এই লবনের নাম দিয়েছিলো বরিসল্ট ! বরিসল্ট থেকে ধিরে ধিরে রুপান্তরিত হয়ে বরিশাল রূপ পেয়েছে উক্ত অঞ্চলের নাম ।
বরিশাল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
বরিশাল জেলা আমড়ার জন্য বিখ্যাত দেশ জুড়ে। এছাড়া নিম্নে সমগ্র দেশ ব্যাপী বরিশালের সুখ্যাতি অর্জনের কিছু বিশেষ কারণ উল্লেখ করা হলোঃ
বরিশাল জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম
একটি অঞ্চল বা দেশ বা নির্দিষ্ট ভূখন্ড পরিচিত হওয়ার পেছনের অন্যতম অবদান থাকে সেই সকল অঞ্চলে জন্মগ্রহনকারী খ্যাতনামা ব্যাক্তিবর্গের জন্য। ঠিক তেমনি, বরিশাল কিসের জন্য বিখ্যাত সেই ইন্ডিগেট করা যেতে পারে ,উক্ত বিভাগে জন্মগ্রহণকারী কিছু বিশিষ্ট ব্যাক্তির পরিচয়ে।
-
একে ফজলুল হকঃ বাংলাদেশে রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনন্য নাম একে ফজলুল হক – জন্ম গ্রহণ করেছেন এই বরিশালেই। মূলত একে ফজলুল হকের মতো অবিসংবাদি নেতাদের হাত ধরেই বাঙালী নতুন ভাবে বাচার আশা করেছিলো। “শের ই বাংলা” উপাধি প্রাপ্ত এই কিংবাদন্তিকে কে না চেনে !
-
তোফায়েল আহমেদঃ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রবিন নেতা, ডাকসুর সাবেক ভিপি, সংসদ সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী। তিনিই ১৯৬৯ সালে বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি দিয়েছিলেন।
-
গুরুদাস দাশগুপ্তঃ তিনি বাংলাদেশে বরিশাল জেলায় জন্মগ্রহণ করলেও, বর্তমানে তিনি ভারতের মতো বৃহৎগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একজন সংসদ সদস্য।
-
মোহাম্মাদ আলী বগুড়াঃ তিনি তার নামের সাথে বগুড়া শব্দটি যোগ করেছেন কেবলমাত্র তার জন্মস্থানের পরিচয় বহনের উদ্দেশ্যে। তিনি পাকিস্তানের প্রথম বাঙালী প্রধানমন্ত্রী। তিনি কেবল কয়েক মাস ক্ষমতায় ছিলেন।
এছাড়াও এমন শ’খানেক ব্যাক্তিত্বে সমৃদ্ধ বরিশাল।
বরিশাল জেলার বিখ্যাত খাবার
বরিশাল জেলার বিখ্যাত খাবারের লিস্ট তৈরি করতে গেলে দিন কাবার হয়ে যাবে তবুও লিস্ট তৈরি হবে না।
বরিশাল ইলিশ ও মিষ্টির শহর ।
বরিশালের সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবার হল বরিশালের ইলিশ । অনেকের চাঁদপুর কে ইলিশের বাড়ি মানতে নারাজ। তাই তাদের মতে বরিশালই ইলিশের আসল বাড়ি । এছাড়াও পোলাও, কোরমা ,রোস্ট ,কালিয়া, কাবাব ,রেজালাসহ আরো বেশ কয়েকটি মসলাদার মোগলাই পদের খাবারে বরিশাল মসুহুর।
বরিশালে পাওয়া যায় বিস্কি নামের একটি মিষ্টান্ন । আউশ চাল ,গুড়, নারকেলের সমন্বয়ে গঠিত হয় এই খাবার। বরিশাইল্লাদের ডেজার্ট হিসেবে বিস্কি চাই চাই !
বরিশালে পাওয়া যায় নানা রকমের ভর্তা ! বরিশালের প্রত্যেকটি রেস্টুরেন্ট-এ মিলবে কলার মোচার ডালনা, শাপলার ডগা ভাজি , চিংড়ি মাছের হরেক রকমের রেসিপি, কলার পাতায় পোক্ত নারকেল ভাজি।
এছাড়াও মান কচু দিয়ে গরুর মাংস ভুনা বরিশালের একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার । কেবলমাত্র এই খাবারটি খাওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন ছুটে যায় বরিশালে ।
ছোট বড় রেস্টুরেন্টে ঘেরা পুরো বরিশাল শহর । বরিশাল সদর গার্লস স্কুলের সামনে রয়েছে নামেজের বিরিয়ানি ও ফিরনি, বরিশাল শহরের অত্যন্ত পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী একটি রেস্টুরেন্ট । লেচু শাহ মাজারের সামনে রয়েছে একটি নামহীন দইয়ের দোকান। যদিও সবাই লেচু সাহের দইয়ের দোকান নামে চেনে। এখানে পাওয়া যায় দই,মাখন,ঘোল,মোটা চালের মুড়ি এবং চিড়া ।
এছাড়ো রয়েছে শচীন ঘোষের মিষ্টি, সুসীম মিষ্টান্ন ভান্ডার, নিতাইয়ের মিষ্টি, গুঠিয়ার সন্দেশ , ফলপট্টি মোড়ের আলুর চপ আরো কত কি !
নাম শুনেই যেন জিভে জল চলে আসে।
বরিশাল জেলার দর্শনীয় স্থান
বরিশাল জেলার বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থানগুলোর হলো-
দুর্গা সাগর দিঘী
১৭৮০ সালে তৎকালীন রাজা শিবনারায়ণ এলাকাবাসীর পানির সংকট দূর করার জন্য ৪৫.৪২১ জায়গায় একটি কৃত্রিম দিঘী গড়ে তুললেন। তিনি একজন দুর্গা উপাসক ছিলেন এবং সে কারণে তিনি এই দিঘীটির নাম দিয়েছিলেন দুর্গাসাগর দীঘি।
দিগিটির চারপাশে চোখে পড়বে সুপারি ও নারিকেল গাছ । অপরূপ মনোরম সৌন্দর্য খেলা দেখিতেই সত্যিই একজন মানুষের মন ভালো করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ।
শেরেবাংলা স্মৃতি জাদুঘর
বাংলাদেশের ইতিহাসের কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের স্মৃতি রক্ষার্থে এই জাদুকরের নামকরণ করা হয় শেরে বাংলা স্মৃতি জাদুঘর । বরিশাল জেলা শহর থেকে প্রায় 24 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জাদুঘরটি একে ফজলুল হকের ২৭ একর বসতবাড়ির উপর নির্মাণ করা হয়েছে ।
বঙ্গবন্ধু উদ্যান বেলস পার্ক
এটি বেল্স পার্ক নামেও পরিচিত । বগুড়া জেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি রক্ষার্থে এই পার্কের নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু উদ্যান বেলস পার্ক।
১৮৯৬ সালে এই পার্কটি সর্বপ্রথম গড়ে ওঠে।
মিয়া বাড়ি জামে মসজিদ
বগুড়া শহর থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মিয়া বাড়ি মসজিদ বরিশালের অন্যতম আকর্ষণ। এটি ১৮০০ সালে সর্বপ্রথম নির্মাণ করা হয়েছিল।
সবকিছুকে ছাপিয়ে বগুড়া জেলার মূল আকর্ষন এর অনন্য সাধারণ একটি জলপথ। উৎসবের মৌসুমে ব্যস্ত হয়ে পড়ে জলপথে ক্রমাগত চলমান লঞ্চগুলি। দুর্ঘটনাও নেহাত কম নয় ।
অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য্যে ঘেরা, আবহমান কৃষ্টি কালচার, ও মুখোরোচক খাবার জানান দিয়ে দেয়, বরিশাল কিসের জন্য বিখ্যাত ! তাহলে কবে পাড়ি জমাচ্ছেন – প্রিয় জেলা বরিশালে ? আসা করি এই বরিশাল জেলাটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আসা করি আজকে এই আর্টিকেল থেকে ” বরিশাল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ” তা সম্পর্কে এবং বরিশাল জেলা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন। আসা করি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।