ঈদের দিন দুপুর থেকে বুধবার পর্যন্ত ৫ দিনে মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় পার্কে পর্যটক এসেছে ১১ হাজার ৯৯৩ জন। এ থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৬৯ টাকা। ওই সময়কালে বিদেশি পর্যটক এসেছিল ১৪ জন।
লাউয়াছড়ায় জীববৈচিত্র্য রক্ষার কাজে নিয়োজিত বন্যপ্রাণী ব্যবস্হাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষন বিভাগের শ্রীমঙ্গল কার্যালয়ের ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার মো. শহীদুল ইসলাম জানান, ঈদের দিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাউয়াছড়ায় পর্যটক এসেছে সাড়ে ৩ হাজার জন। এরমধ্যে বিদেশি পর্যটক ছিল ৭ জন। ওইদিন রাজস্ব আয় হয় ১ লাখ ৬৮ হাজার ১৩৩ টাকা। ঈদের দ্বিতীয় দিন লাউয়াছড়ায় পর্যটক প্রবেশ করে ২ হাজার ৪৭৬ জন। বিদেশি ছিল ৫ জন। রাজস্ব আয় ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৩৭১ টাকা। ঈদের তৃতীয় দিন পর্যটক আসে ২ হাজার ২০১ জন। রাজস্ব আয় হয় ১ লাখ ৭৫৯ টাকা। ঈদের চতুর্থ দিন পর্যটকের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯৯৮ জন। রাজস্ব আয় ৯৩ হাজার ৭০০ টাকা। ঈদের পঞ্চম দিন অর্থাৎ গত বুধবার লাউয়াছড়ায় পর্যটক প্রবেশ করে ১ হাজার ৮১৯ জন। এদিন রাজস্ব আয় হয় ৮০ হাজার ৬০৬ টাকা।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্হাপনা বিভাগ সুত্র জানায়, জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর মহামিলনের এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের অন্যতম স্হান লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। রেইনফরেস্ট খ্যাত বাংলাদেশের বিখ্যাত বনগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ বন। এ জাতীয় উদ্যানটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জীববৈচিত্র্যপুর্ণ বন। ২ হাজার ৭৪০ হেক্টর আয়তনবিশিষ্ট পশ্চিম ভানুগাছ সংরক্ষিত বনের অভ্যন্তরে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকাজুড়ে এই উদ্যানের অবস্হান।
বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী ( সংরক্ষণ) ( সংশোধন) আইন ১৯৭৪ অনুসারে ১৯৯৬ সালে এটিকে ‘জাতীয় উদ্যান’ হিসেবে ঘোষনা করা হয়। অদ্ভুত এক নির্জন পরিবেশে অবস্হিত মিশ্র চিরহরিৎ এই উদ্যানে রয়েছে ৪৬০ প্রজাতির জীব। এরমধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় ও ২৪৬ প্রজাতির পাখি।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, এ উদ্যানটি এখন পৃথিবীর মানচিত্রে এক গৌরবময় স্হান দখল করে আছে। বিশ্বব্যাপী বিপন্ন এবং বাংলাদেশে মহাবিপন্ন উল্লুক পৃথিবীর যে ৪টি দেশে দেখা যায় তারমধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম এবং এই লাউয়াছড়া উল্লুকের বৃহত্তম আবাসস্হল। সে কারনে এ উদ্যান উল্লুক দেখার জন্য শ্রেষ্ঠ উদ্যান। তাই এ উদ্যান এখন শুধু পর্যটকদেরই স্হান নয়, এটি এখন এক জীবন্ত ও প্রাকৃতিক গবেষণাগার যেখানে বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণার জন্য গবেষকরা আসছেন।
এ উদ্যানটি এখন শিক্ষা, গবেষণা, ইকো-ট্যুরিজমসহ ভ্রমনপিপাসুদের চিত্তবিনোদনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্হানে পরিনত হয়েছে। তাই শুধু ঈদ মৌসুম নয়, সারা বছরই এখানে পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভিড় লেগে থাকে। শ্রীমঙ্গল বন্যপ্রাণী ব্যবস্হাপনা বিভাগ জানিয়েছে, আরো কয়েকদিন লাউয়াছড়ায় পর্যটক-দর্শনার্থীদের ভিড় থাকবে।