খাগড়াছড়ি জেলায় উদ্যোক্তা তৈরি হবে এমন ভাবনা থেকেই প্রান্তিক জনপদের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পাশে দাঁড়ালেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিন।
মঙ্গলবার (৩০ মে ২০২৩ইং ) সকালের দিকে মাটিরাঙ্গার হাতিয়াপাড়ায় উপকারভোগী নারীদের হাতে মোড়া তৈরীর উপকরণ তুলে দেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন। এসময় খাগড়াছড়ির নারী উদ্যোক্তা বীনা ত্রিপুরা ছাড়াও উপকারভোগীরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সোমবার খাগড়াছড়ির নয় মাইল এলাকায় ৫২জন পাহাড়ী নারীকে ৫কেজি করে কোমর তাঁত বোনার সুতা দেন তিনি।
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা পৌরসভার হাতিয়াপাড়ার বাসিন্দা সুফিয়া খাতুন স্বামীকে হারিয়েছেন বেশ কয়েকবছর আগে। ছেলে-মেয়েরা বিয়ে করে যার যার মতো আলাদা থাকছেন। প্রয়াত স্বামীর রেখে যাওয়া বাড়িতে বসবাস সুফিয়া খাতুনের। দীর্ঘ বছর ধরে মোড়া তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ বৃদ্ধা।
সুফিয়া খাতুনই নয়, মোড়া তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করেন স্বামী পরিত্যাক্ত খালেদা বেগম, বিধবা রোকেয়া বেগম, বিধবা হাসিনা বেগম ও হতদরিদ্র আনোয়ারা বেগমসহ শতাদিক নারী। মোড়া থৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করলেও অর্থ সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
এমন পরিস্থিতিতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ৪৮ জন বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্ত ও সুবিধাবঞ্চিত নারীর প্রতি মানবিক সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিন। মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে সুবিধাবঞ্চিত এসব নারীদের প্রত্যেককে ১০ জোড়া মোড়া তৈরির উপকরণ হিসেবে প্লাস্টিকের বেত (রগ) ও টায়ার দেন তিনি।
মোড়া তৈরির উপকরণ পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে সুফিয়া খাতুন বলেন, ছেলেরা আমার খবর রাখেনা। মেয়েরা স্বামী নিয়ে নিজের সংসারে থাকে। এই বয়সেও মোড়া বিক্রির টাকাতেই নিজের ভরণ-পোষণ করছি। কিন্তু আর্থিক সংকটে মোড়া তৈরির উপকরণ কিনতে কষ্ঠ হতো। ১০ জোড়া মোড় তৈরির উপকরণ পেয়েছি। এখন আমার একটা পুঁজি তৈরি হলো।
বিধবা রোকেয়া বেগম বলেন, আল্লাহ নিজেই আমাদের মতো গরীবদের সাহায্যের জন্য ম্যাডামকে পাঠিয়েছেন। আমরা সারাজীবন তার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো। অপর বিধবা হাসিনা বেগম দু‘হাত তুলে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বলেন, ম্যাডাম যা করলেন আজকের দুনিয়ায় কেউ কারও জন্য করে না।
কোমর তাঁত বোনার সুতা পাওয়া হেমালিকা ত্রিপুরা বলেন, ম্যাডামের দেয়া সুতায় কোমর তাঁত বুনে অনেকেই স্বাভলম্বি হয়েছেন। আমরাও তাদের মতো করে ঘুরে দাঁড়াবো। তিনি আমাদের পাশে দাড়িয়ে মানবতার পুরিচয় দিয়েছেন। তার এ দান আমরা কখনো ভুলবো না।
এর আগেও এখানকার নারীদের পাশে দাঁড়ানোর কথা উল্লেখ করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. আলাউদ্দিন লিটন বলেন, কোনো ধরনের স্বার্থ ছাড়াই যে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়াতে তার উদাহরণ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিন। কয়েক‘শ মাইল দুরের বাসিন্দা হয়েও এখানকার হতদরিদ্র নারীদের স্বাভলম্বি করতে প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিনের এমন উদ্যোগ অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে।
শিক্ষকতাকালীন সময়েও নিজের বেতনে মানুষের জন্য কাজ করার কথা জানিয়ে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ফেরদৌসী পারভিন বলেন, সুবিধা বঞ্চিত নারীদের জন্য কিছু করার তাগিদ সবসময়ই অনুভব করি। বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা ও অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করতেই আমি নিজ উদ্যোগে এসব কাজ করছি। একজন নারী যদি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হবে এমন ভাবনা থেকেই প্রান্তিক জনপদের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরী করতেই তার এ প্রচেষ্টা বলে জানালেন প্রফেসর ফেরদৌসী পারভীন।