শরীয়তপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
প্রশ্নটি সচরাচর আমরা অনেকেই করে থাকি। কোন জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত। সেই সূত্র ধরেই যদি প্রশ্ন আসে শরীয়তপুর জেলাকিসের জন্য বিখ্যাত ? তবে তার উত্তর দেয়াটা অনেকটাই মুশকিল হয়ে পরবে যদি উত্তরটা জানা না থাকে। আজ সেই অজানাকে জানতেই আমাদের আজকের আয়োজন। এই পোষ্টটির মাধ্যমে শরীয়তপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সে বিষয়টি তুলে ধরব। আশা করি, আপনাদের ভালো লাগবে।
ভৌগলিক অবস্থান :
বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জেলা শরীয়তপুর। এই জেলা বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। শরীয়তপুর জেলার উত্তরে মুন্সীগঞ্জ, পূর্বে চাঁদপুর, পশ্চিমে মাদারীপুর এবং দক্ষিণে বরিশাল জেলা অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে শরীয়তপুর জেলা ১১৮১.৫৩ বর্গ কিলোমিটার। এই জেলায় মোট ৪টি উপজেলা ও ৫টি থানা নিয়ে বিস্তৃত।
আজকেরআর্টিক্যালে আপনারা জানতে পারবেন শরীয়তপুর জেলা সম্পর্কে আর শরীয়তপুর জেলারবিখ্যাত কি কি রয়েছেসেগুলো জানতে পারবেন । আর দেরিকেন? চলুন জেনে নেয়া যাক শরীয়তপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত।
নামকরণের ইতিহাস:
১৯৪৭ সালর ১৪ ই আগস্ট থেকে ১৯৭১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত শরীয়তপুর জেলা সহ এ অঞ্চল ছিল পাকিস্তানেরই একটি অংশ। শাসনিক সুবিধার্থে মাদারীপুরের বৃহৎ পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক মহকুমা গঠনের প্রয়াস ১৯১২ সাল হতেই নেয়া হয়েছিল। এর পরে পাকিস্তান সৃষ্টিও বাংলাদেশের অভ্যুদয় নতুন প্রশাসনিক দৃষ্টি ভঙ্গি গঠন করতে সহায়তা করে। স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৬ সালে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় মাদারীপুরের পূর্বঞ্চল নিয়ে একটি নতুন মহকুমা গঠিত হবে। বিষয় নির্বাচনী কমিটির সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক, ব্রিটিশ বিরোধী তথা ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারে এর নাম করণ হয় শরীয়তপুর এবং এর সদর দপ্তরের জন্য পালং থানা অঞ্চলকে বেছে নেয়া হয়। ১৯৭৭ সালের ১০ ই আগস্ট রেডিওতে সরকার কর্তৃক মহকুমা গঠনের ঘোষণা দেয়া হয় এবং ঐ বছরের ৩রা নভেম্বর এ মহকুমার আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন উপদেষ্টা জনাব আবদুল মোমেন খান। প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব আমিনুর রহমান। এর পর রাষ্ট্রপতি হুসেইন মোঃ এরশাদ সরকারের প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের ফলে শরীয়তপুর মহকুমাকে জেলায় রূপান্তর করা হয়। ৭ই মার্চ ১৯৮৩ সালে জেলা গঠনের ঘোষণা হয়। ১৯৮৪ সালের ১লা মার্চ শরীয়তপুর জেলার শুভ উদ্বোধন করেন তৎকালীন তথ্য মন্ত্রী জনাব নাজিম উদ্দিন হাশিম। বর্তমান শরীয়তপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।
যে সকল কারনে শরীয়তপুর জেলা বিখ্যাত
শরীয়তপুর অনেক আগে থেকেই মৃৎশিল্প ও পিতলের জিনিসপত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানকার টেরাকোটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পটারি ইউরোপসহ বিশ্বের ২০টি দেশে যায়। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মনে করেন, পদ্মা সেতু এই দুই শিল্পকে আরও এগিয়ে নেবে।
এই জেলায় ময়দার কল : ৪ টি। বরফের কল : ১৩ টি। তেলের কল : ৩ টি। পূর্বে এই জেলা কাশা ও পিতলের তৈজষপত্র তৈরীর জন্য বিখ্যাত ছিল।
শরীয়তপুর অনেক আগে থেকেই মৃৎশিল্প ও পিতলের জিনিসপত্রের জন্য বিখ্যাত। এখানকার টেরাকোটা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পটারি ইউরোপসহ বিশ্বের ২০টি দেশে যায়। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মনে করেন, পদ্মা সেতু এই দুই শিল্পকে আরও এগিয়ে নেবে।
এই জেলার বিখ্যাত খাবার
শরীয়তপুর জেলার বিখ্যাত খাবারের নাম বিবিখানা পিঠা।পরিবেশনে যেমন আভিজাত্য খেতেও তেমনি সুস্বাদ্য মুখরোচক। বাড়িতে অতিথির আগমন, বিয়ে, আড্ডা,অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের আয়োজনে বিবিখানা পরিবেশন করা শরীয়তপুরের রীতি বলা চলে। ধারনা করা হয় এই পিঠার প্রচলন শুরু হয়েছিলো রাজা বিক্রমাদিত্য এর শাষনামলে।
শরীয়তপুর জেলার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব :
গোপালচন্দ্র ভট্টাচার্য (১৮৯৫-১৯৮১) – পতঙ্গবিশারদ, উদ্ভিদবিদ।
গোলাম মওলা (১৯২০-১৯৬৭)- চিকিৎসক ও ভাষা সৈনিক।
রথীন্দ্রকান্ত ঘটক চৌধুরী (১৯২১-১৯৮৮)- কবি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, সমাজসেবক, রবীন্দ্র গবেষক
আবু ইসহাক (১৯২৬-২০০৩)- কবি ও সাহিত্যিক।
গীতা দত্ত: সংগীত শিল্পী (জন্ম: ২৩ নভেম্বর ১৯৩০ – মৃত্যু: ২০ জুলাই ১৯৭২)।
এ জেড এম মোস্তাক হোসেন: চিকিৎসক।
আবিদুর রেজা খান – মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, প্রাক্তন সাংসদ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের প্রথম গভর্নর।
টি. এম. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ- সাবেক এমপি শরীয়তপুর-২।
আবদুল মোতালেব সরদার – প্রাক্তন ফুটবল খেলোয়াড়, কলকাতা মোহামেডান।
রাজবল্লভ সেন – বিক্রমপুরের রাজা।
এম. আজিজুল হক – সাবেক আইজিপি।
নাহিম রাজ্জাক – সংসদ সদস্য, শরীয়তপুর-৩ আসন।
খন্দকার আবদুল জলিল- সাবেক এমপি, শরীয়তপুর-২।
আবদুর রাজ্জাক (চিত্রশিল্পী)।
আনিছুর রহমান (সচিব)।
এস. এম. গোলাম ফারুক:-সরকারি কর্মকর্তা।
শরীয়তপুর জেলার ঐতিহাসিক স্থাপনা ও স্থান :
কার্তিকপুর জমিদার বাড়ি
কোদালপুর দরবার শরীফ
সুরেশ্বর দরবার শরীফ
মডার্ন ফ্যান্টাসি কিংডম
বুড়ির হাট মসজিদ
বুড়ির হাট মুন্সী বাড়ী
লাকার্তা শিকদার বাড়ি
পন্ডিতসার চিশতীনগর দরবার শরীফ
মগর
ভোজেশ্বরের শিবলিঙ্গ – উপমহাদেশের সবচেয়ে বড় শিবলিঙ্গ
মহিষারের দীঘি
রাজনগর
কুরাশি
হাটুরিয়া জমিদার বাড়ি
রুদ্রকর জমিদার বাড়ি
রুদ্রকর মঠ
রাম সাধুর আশ্রম
মানসিংহের বাড়ী
ধানুকার মনসা বাড়ি
সখিপুর আনন্দবাজার বেরিবাধ
আলুর বাজার ফেরিঘাট
ছয়গাঁও জমিদার বাড়ি
তাহলে আজ জানতে পারলেন তো শরীয়তপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত। আমাদের আজকের আয়োজনটি আপনাদের কাছে ভালো লাগলেই আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক। সব সময় আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।