শুক্রবার, নভেম্বর ২২, ২০২৪
spot_img

রোহিঙ্গাদের কণ্ঠে দেশে ফেরার আকুতি

উখিয়া ও টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে ‘রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় ৩২টি ক্যাম্পের পৃথক উদ্যেগে ১২টি স্থানে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ২৫ আগস্টের এই দিনটিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আগমনের বছরপূর্তি উপলক্ষে এ দিবসটি পালন করা হয়। সবকটি সমাবেশ মিলে অন্তত অর্ধলাখ রোহিঙ্গা উপস্থিত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা।

প্রতিটি সমাবেশে উপস্থিত রোহিঙ্গা নেতারা রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার দাবির পাশাপাশি দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি তুলেছেন।

শুক্রবার সকালে সরেজমিন উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুরা সমাবেশস্থলে জড়ো হতে থাকেন। সমাবেশে অনেকে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার ও প্রত্যাবাসনের দাবি সম্বলিত প্লে কার্ড ও পোস্টার হাতে যোগ দিয়েছেন। ঘড়ির কাঁটায় সকাল ১০টায় শুরু হয়ে দুপুর ১২টায় শেষ হয় সমাবেশ।

কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ওই সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়য়ের, মাস্টার কামাল, মৌলভী সৈয়দ উল্লাহ ও রোহিঙ্গা যুবনেতা মোহাম্মদ মুসাসহ অনেকে বক্তব্য রাখেন।

রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসের সমাবেশের বক্তব্যে আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস (এআরএসপিএইচ) এর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের যেভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা দেখে পুরো দুনিয়া রোহিঙ্গা মজলুমদের জন্য কেঁদেছে। আমরা সেই গণহত্যার বিচার চাই। সেদিন মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে ভেবেছিল তারা রাখাইন রাজ্যকে রোহিঙ্গামুক্ত করেছে।

কিন্তু আমরা আমাদের জন্মভূমি আরাকান কাউকে লিজ দিয়ে আসিনি। যেকোনোভাবে রোহিঙ্গারা আরাকান ফিরতে চায়। বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দাবি থাকবে রোহিঙ্গাদের রোহিঙ্গাদের দ্রুত দেশে ফেরানোর উদ্যেগ নিন।

রোহিঙ্গা যুবনেতা মোহাম্মদ মুসা বলেন, আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটা নিরাপদ দেশ গড়তে চাই। যেটি তারা নিজেদের দেশ, আপন ঠিকানা বলে পরিচয় দেবে।

আর সেটিই হবে মিয়ানমার। আমরা আমাদের জন্মভূমি আরাকানে ফিরতে চাই। বাংলাদেশে শরণার্থী জীবনের ছয় বছর কেটেছে, ভাসমান এ জীবন থেকে মুক্তি চাই।

রোহিঙ্গা নেতা মৌলভী সৈয়দ উল্লাহ বলেন, আমরা আমাদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাব। রাখাইন আমাদের জন্মভূমি, মিয়ানমার আমাদের দেশ। নিজ দেশে বসবাস করা আমাদের অধিকার। যখন মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল, তখন শুধু কয়েক লাখ অবুজ শিশু সন্তানের দিকে তাকিয়ে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম।

সমাবেশের শুরুতে রোহিঙ্গা শিশুদের পরিচালনায় মিয়ানমারের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে রোহিঙ্গা ভাষায় তারানা (সংগীত) পরিবেশনের মাধ্যমে গণহত্যার প্রতিবাদ ও প্রত্যাবাসনের দাবি জানানো হয়। একই সমাবেশে মোহাম্মদ রফিক নামে বয়োবৃদ্ধ এক রোহিঙ্গা গণহত্যার বর্ণনা করেন। এ সময় সমাবেশে উপস্থিত অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

১৪-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) পুলিশ সুপার মো. সাইফুজ্জামান জানান, রোহিঙ্গা আগমনের ছয় বছরে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবস উপলক্ষে সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করেছে। আমাদের অধীনে পাচঁটি ক্যাম্পে আলাদাভাবে সমাবেশ হয়েছে। প্রতিটি সমাবেশে রোহিঙ্গারা শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি চেয়ে নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন।’

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ