মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৩, ২০২৪
spot_img

তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত

তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত? 

তেতুলিয়া বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তর অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত একটি উপজেলা। এটি ভারত সীমান্তে অবস্থিত বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একটি উপজেলা। 

 

তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত

 

এবং আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত সেই সম্পর্কে। তার পাশাপাশি তেতুলের সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে নেব যা আমরা অনেকেই জানিনা। 

তেতুলিয়া কোন বিভাগে অবস্থিত?

 

তেতুলিয়া কোন বিভাগে অবস্থিত?

 

যেহেতু আমাদের দেশে সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত রংপুর বিভাগ সুতরাং নিঃসন্দেহে বলাই চলে তেতুলিয়া রংপুর বিভাগে অবস্থিত। 

 

যদিও পূর্বে তেতুলিয়া রাজশাহী বিভাগের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১০ সালের রংপুর রাজশাহী থেকে আলাদা হয়ে গিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিবাহ হিসেবে গড়ে ওঠে যার ফলে তেতুলিয়া রংপুর বিভাগের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়। 

তেতুলিয়া কোন জেলায় অবস্থিত?

 

তেতুলিয়া কোন জেলায় অবস্থিত?

 

তেতুলিয়া রংপুরের পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত। পঞ্চগড় বাংলাদেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত জেলা। 

তেতুলিয়া ইতিহাস

 

তেতুলিয়া ইতিহাস

 

১৮৬০ সালে তেতুলিয়াকে একটি মহকুমায় পরিণত করে তেতুলিয়া সহ আরো বেশ কয়েকটি মহাকুমা মিলে রংপুর জেলা গঠিত হয়। 

 

তবে পরবর্তীতে ১৮৬৯ সালে আকস্মিকভাবে এক ধরনের নোটিশ এর মাধ্যমে তেতুলিয়ার সকল ক্ষমতা জলপাইগুড়ি ডিস্ট্রিক্ট  কালেক্টরের নিকট হস্তান্তর করা হয় । যার ফলে তেতুলিয়া জলপাইগুড়ি জেলার অন্তর্ভুক্ত হয় ।

 

পরবর্তীতে ১৯৪৭ সালে যখন দেশভাগ হয় তখন, তেতুলিয়া ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিরোধপূর্ণ এলাকায় পরিণত হয়। যদিও পরবর্তীতে এটি মীমাংসা হয়েছিল তবে সম্পূর্ণ তেতুলিয়াকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি।

 

তেতুলিয়া নামকরণ নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে । ধারণা করা হয়ে থাকে একদা এখানে বৃহৎ একটি তেঁতুল গাছ ছিল বিধায় এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে তেতুলিয়া । তবে অনেকে মনে করে থাকেন এখানে টিটু নামের একজন ইংলিশ বণিক বসবাস করত যার বাড়ি ছিল টিলার ওপরে । এবং পরবর্তীতে টিটু এবং টিলা এ দুটি শব্দের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছিল তেতুলিয়া নামটি। তবে প্রথম মতামতটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ।

তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত

 

তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত

 

প্রথমত তেতুলিয়া বাংলাদেশের সর্বোত্তরে অবস্থিত জন্য তেতুলিয়া বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পরিচিত ।

 

তেতুলিয়া থেকে ভারতের কাঞ্চনজঙ্গা দেখার অসাধারণ সুযোগ করেছে। সে কারণে বাংলাদেশি পর্যটকটা প্রায় ছুটে আসেন। তার পাশাপাশি তেতুলিয়ার চা বেশ বিখ্যাত। 

 

তেতুলিয়া রয়েছে পাথর এবং কয়লা । তেতুলিয়া এসেছে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহৎ প্রাকৃতিক জ্বালানি তেলের খনি ।

তেতুলিয়া নদী

 

তেতুলিয়া নদী

 

তেতুলিয়া উপজেলার উপর দিয়ে মোট ৫টি নদী বয়ে গেছে। এ সকল নদী গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:

করোতোয়া, ডাহুক, মহানন্দা, গোবরা। 

 

তবে সবচেয়ে মশার বিষয় হলো তেতুলিয়া নামের বাংলাদেশ একটি নদী রয়েছে যেটি বাংলাদেশের দক্ষিণ অঞ্চলে অবস্থিত। তেতুলিয়া উপজেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত হলেও তেতুলিয়া নদী দক্ষিনে অবস্থিত বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি মূলত একটি বেণী প্রকৃতির নদী। 

 

দৈর্ঘ্য বিবেচনায় আনুমান ১৩১ কিলোমিটার এবং প্রস্থের প্রায় ৪০০ মিটার। এর উৎপত্তিস্থল মেঘনা নদী এবং মোহনা অবস্থিত বঙ্গোপসাগরে। 

তেতুলিয়া দর্শনীয় স্থান

 

তেতুলিয়ার দর্শনীয় স্থান

 

যারা সচরাচর প্রশ্ন করে থাকেন তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত তাদের একটিবার হলেও তেতুলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করে আসা উচিত। 

 

রংপুরের পঞ্চগড় জেলায় অবস্থিত তেতুলিয়া উপজেলায় বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এমনিতেই তো দেশের সবচেয়ে উত্তরে অবস্থিত হওয়ার কারণে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বিখ্যাত একটি উপজেলা । তার পাশাপাশি দর্শনীয় স্থানগুলো তেতুলিয়া উপজেলাকে একটি আলাদা বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমল্ডিত করেছেন। 

 

তেতুলিয়া দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে:

 

জিরো পয়েন্ট

বলতে গেলে এটি বাংলাদেশের সর্ব উত্তরে অবস্থিত পর্যটন এলাকা। জিরো পয়েন্ট এরপর থেকে কেবল ভারতের সীমান্ত। এছাড়াও পাশে রয়েছে নেপাল। এখানে নেপাল ও বাংলাদেশের মাঝে বিভিন্ন পণ্য বিনিময় করে থাকে। 

 

১৯৯৭ সালের ১০ একর জমির উপর নির্মাণ করা হয়েছিল জিরো পয়েন্ট । এটি কেবলমাত্র ইট এবং পাথর দ্বারা নির্মাণ করা হয়েছে। 

 

এছাড়াও জিরো পয়েন্ট দিয়ে ভারত,নেপাল এবং ভুটানে যাতায়াত করা যায় তাও আবার সড়ক পথে। যার ফলে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ট্রানজিট হয়ে উঠেছে বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য। 

 

তেতুলিয়া ডাকবাংলো

তেতুলিয়া ডাকবাংলা  বাংলাদেশের তেতুলিয়া উপজেলার অবস্থিত একটি রেস্ট হাউস। অভিনব এবং নান্দনিক আর্কিটেক ব্যবহার করে এই ডাকবাংলাটি নির্মাণ করা হয়েছে। যদিও বলা হয়ে থাকে এখানে ভিক্টোরিয়ান আর্কিটেক ব্যবহার করা হয়েছে। তবে দেখতে অনেকটা জাপানি ইমারত গুলোর মত। 

 

সূর্যোদয়ের পর থেকে শুরু করে বেলা দশটা অথবা বারোটা পর্যন্ত তেতুলিয়া ডাকবাংলা থেকে সরাসরি কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করা যায়। 

বিশেষ ব্যক্তিত্বের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের থাকার জন্য এটি উন্মুক্ত থাকে। এছাড়াও অনেকে পিকনিক করার জন্য এটিকে পিকনিক স্পট হিসেবে বেছে নেন। 

 

তেতুলিয়া চা বাগান

চা বাগানের কথা বললেই সর্বপ্রথম সিলেটের কথা মাথায় আসে । তবে শুধু সিলেটে নয় বরং পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি চা বাগান। মূলত এই সকল চা বাগান ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে।

 

পঞ্চগড় জেলা শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে তেতুলিয়া উপজেলায় অবস্থিত এ সকল চা বাগান। তেতুলিয়ার চা বাগানের সাথে সিলেটের চা বাগানের খুব একটা পার্থক্য নেই । কেবল সিলেটের চা বাগান গুলোতে ম্যানেজারদের টাকার জন্য বড় বড় সাদা দালান রয়েছে, তেতুলিয়ায় তা নেই। 

 

তেতুলের চা বাগান গুলোর মধ্যে অন্যতম চা বাগান হল কাজি টি এস্টেট, তেতুলিয়া টি কোম্পানি ডাহুক টি এস্টেট ইত্যাদি। 

 

 

পঞ্চগড় থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা

 

পঞ্চগড় তেতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করা যায়। বিশেষ করে মেঘমুক্ত শরতের আকাশে কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করে থাকেন পর্যটকেরা। 

কাঞ্চনজঙ্ঘা উপভোগ করার সবচেয়ে ভালো স্পট হলো তেতুলিয়া ডাকবাংলো। 

 

শরতের মেঘমুক্ত আকাশে যখন কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়া যায় তখন মনে হয় পৃথিবীর বুকে একফালি স্বর্গ নেমে এসেছে। এই অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক ভিড় জমান তেতুলিয়াতে। 

 

আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল তেতুলিয়া কিসের জন্য বিখ্যাত সে সম্পর্কে। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া বাংলাদেশের প্রত্যেকটি উপজেলা এবং জেলা নিজের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য তারা দেশের মানুষের কাছে পরিচিত। তবে তেতুলিয়া- সারা বাংলার জন্য বিশেষ কিছু এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি উপজেলা ! আসা করি আজকে আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ। 

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ