মৌলভীবাজার জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
মৌলভীবাজার বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের অবস্থিত সিলেট বিভাগের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটিকে বাংলাদেশের “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আধুনিক নগর সভ্যতা ও মানসম্পন্ন নাগরিক সুবিধার কারণে মৌলভীবাজার সারা বাংলাদেশের ভেতরে সমাদৃত এবং বিখ্যাত একটি জেলা। এবং আজকের আর্টিকেলে আমরা জানতে চলেছি মৌলভীবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত সে সম্পর্কে।
মৌলভীবাজার জেলার ইতিহাস
১৭ শতকের পূর্বে মৌলভীবাজার কামরূপ কামাখ্যা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
১৮৮২ খ্রিস্টাব্দের পহেলা এপ্রিল মৌলবী সৈয়দ কুদরত উল্লাহ এখানে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিল। তার পাশাপাশি তিনি মোট ২৬টি পরগনা নিয়ে শ্রীহট্ট মহকুমা প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে এর নামকরণ করা হয়েছিল সাউথ সিলেট।
পাকিস্তান শাসনামলে, ১৯৬০ সালে এই অঞ্চলের নাম সাউথ সিলেট থেকে মৌলভীবাজারে রূপান্তর করা হয়। মূলত মৌলবি সাহেব কুদরত উল্লাহর নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয় মৌলভীবাজার। তবে তার পূর্বেও মানুষের মুখে মুখে এই অঞ্চলের নাম প্রচলিত ছিল মৌলভীবাজার হিসেবে।
১৯৮৪ সালে হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের সময়কালে মহাকুমা প্রথা বিলুপ্ত করা হলে মৌলভীবাজারকে একটি জেলায় উন্নিত করা হয়।
মৌলভীবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত
মৌলভীবাজার সমগ্র বাংলাদেশের বেশ কিছু কারণে বিখ্যাত তবে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল চা এবং রাবার শিল্প। কেননা মৌলভীবাজারে প্রচুর পরিমাণে রাবার এবং চা উৎপন্ন হয়ে থাকে।
এছাড়াও মৌলভীবাজার জেলার বেশ কিছু পর্যটন কেন্দ্রের কারণে এটি বিখ্যাত। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত হওয়ার কারণে মৌলভীবাজার বিভিন্ন ধরনের নান্দনিক প্রাকৃতিক সামগ্রী দ্বারা ঘেরা। এছাড়াও এখানকার রসগোল্লা ও খাসিয়া পান সারা পৃথিবীব্যাপী সমাদৃত।
মৌলভীবাজার দর্শনীয় স্থান
মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোর জন্য মৌলভীবাজার অত্যন্ত বিখ্যাত। যার প্রশ্ন করে থাকেন মৌলভীবাজার জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত তাদের জন্য মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলো অত্যন্ত উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে।
মৌলভীবাজারের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান
এটি মূলত একটি সংরক্ষিত বন অঞ্চল যেটি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। এটি সাতটি বন্যপ্রাণীর অভয় অরণ্য হিসেবে পরিচিত। ১২৫০ হেক্টর আয়তনের এজাতীয় উদ্যানটিকে অনেকে বলে থাকে প্রাকৃতিক জাদুঘর। এছাড়াও এটি বাংলাদেশের ট্রপিকাল রেইন ফরেস্ট নামে পরিচিত।
মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত
বর্তমানে বাংলাদেশে আরও বেশ কিছু জলপ্রপাত আবিষ্কৃত হয়েছে তবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সকলের ঊর্ধ্বে মাধবপুর জলপ্রপাত।
এটি প্রায় ১৬২ ফুট উঁচু। ২০০১ সালে এখানে একটি ইকোপার্ক স্থাপন করা হয় যার নামকরণ করা হয় মাধবপুর ইকোপার্ক। ২৬৭ একর জায়গার উপর গড়ে উঠেছে এই ইকোপার্কটি। মাধবপুর জলপ্রপাত এর কাছে পরিকুন্ড নামের আরো একটি ঝর্ণা রয়েছে।
মনিপুরী পল্লী
বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলে কোথাও না কোথাও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বসবাস হয়েছে। ঠিক তেমনি মৌলভীবাজার শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে শ্রীমঙ্গলে বসবাস করে একদল মনিপুরী। তাদের নিয়ে গড়ে উঠেছে মনিপুরী পল্লী।
মনে পড়ে পল্লীতে প্রবেশ করলে মনিপুরীদের জীবন মান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। বিশেষ করে তাদের হাতে তৈরি পোশাক, শাল চাদর,শাড়ি,সালোয়ার কামিজ, ব্যাগ, ফতুয়া,পাঞ্জাবি ইত্যাদি সারা দেশি জুড়ে বিখ্যাত। অবাক করার বিষয় হল, এগুলো খুবই সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হয়।
মৌলভীবাজারের চা বাগান
মৌলভীবাজাকে বাংলাদেশের চা বাগানের রাজধানী বলা হয়ে থাকে। মৌলভীবাজার জেলায় মোট ৯২ টির মত চা বাগানো রয়েছে। চা বাগানের নজর কাড়া সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য প্রতিবছর অনেক পর্যটক এখানে পাড়ি জমান।
এছাড়াও মৌলভীবাজারে একটি বিশেষ স্থাপত্য রয়েছে, ইংরেজ শাসন আমলে এখানে চা বাগানের ম্যানেজারদের বসবাস করার জন্য সাদা রং এর ভবন নির্মাণ করা হতো। দৃষ্টিনন্দন এই ভবনগুলো এখনো ঠাঁই দাঁড়িয়ে রয়েছে। যদিও চা বাগানে কর্মরত চা শ্রমিকদের জীবন মানের বিন্দুমাত্র উন্নতি সাধিত হয়নি।
মৌলভীবাজার জেলার বিখ্যাত খাবার
মৌলভীবাজার জেলা বিভিন্ন ধরনের খাবারের প্রসিদ্ধ। যার মধ্যে অন্যতম হলো আখনি পোলাও এবং সাতকরা। অথেন্টিক আখনি পোলাওয়ের সাত উপভোগ করতে আপনাকে অবশ্যই মৌলভীবাজার একবার হলেও আসতে হবে।
এছাড়াও এখানকার মাস্টার কেবিনের রসগোল্লা খুবই বিখ্যাত। মৌলভীবাজারে চা এবং খাসিয়া পানের বেশ কদর রয়েছে।
এখানকার বাসিন্দারা স্থানীয়ভাবে আনারস, কমলা, পান, লেবু এবং কাঁঠাল চাষ করে থাকে যেগুলো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়।
মৌলভীবাজার জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি
মৌলভীবাজার বেশ কয়েকজন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং বিশেষ ব্যক্তিত্বের জন্মভূমি। যাদের মধ্যে অন্যতম হলেন:
বীর মুক্তিযোদ্ধা আচকির খান
তিনি মৌলভীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তৃণমূল পর্যায়ের রাজনীতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভূমিকা পালন করেছিলেন যার জন্য মৌলভীবাজার সহ আশেপাশের অঞ্চলে তিনি বেশ প্রভাবশালী একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
২০২১ সালে ২৭শে ফেব্রুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ডাক্তার শফিকুর রহমান
ডক্টর শফিকুর রহমান বাংলাদেশ জামাতে ইসলামের বর্তমান আমির এবং একজন দেশবরেণ্য চিকিৎসক। ২০১৯ সালে তিনি জামায়াতের সেক্রেটারি হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে ২০২২ সালে তিনি জামায়াতের আমীর হিসেবে নির্বাচিত হন।
আহাদ মিয়া
আহাদ মিয়া বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান রাজনীতিবিদ। তিনি মৌলভীবাজার-৪ আসনের একজন সাবেক সংসদ সদস্য। ১৯৮৮ সালের তিনি চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন সাংসদ হিসেবে নিযুক্ত হন।
২০২১ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা হিসেবে তিনি দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু দায়িত্ব পালন করেন।
জনাব আজিজুর রহমান
জনাব আজিজুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রবাসী সরকার কর্তৃক আয়োজিত সামরিক প্রশিক্ষণে প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ২০২০ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার লাভ করেন। তিনি ১৯৪৩ সালে তিনি বাংলাদেশের মৌলভীবাজারের জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২০ সালের ১৮ই আগস্ট কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল মৌলভীবাজার কিসের জন্য বিখ্যাত সে সম্পর্কে। নান্দনিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং প্রখ্যাত রাজনীতিবিদদের জন্মভূমি হওয়ার কারণে মৌলভীবাজার বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলা যেটি তার নিজের বৈশিষ্ট্য দ্বারা অনন্য! আসা করি আজকে আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।