ঢাকার ব্যাংক পাড়া ও পুরান ঢাকাসহ আশপাশের এলাকায় টাকা বহনকারী ব্যক্তিকে টার্গেট করে নিজ থেকে আচমকা ধাক্কা দিয়ে শুরু করে ঝগড়া। এরপর পাশেই ওঁৎ পেতে থাকা সঙ্গীরা এসে মারধর করে লুট করে ভুক্তভোগীর সঙ্গে থাকা টাকা। পুরান ঢাকায় অভিনব পদ্ধতিতে দীর্ঘদিন ধরে ছিনতাই করে আসা চক্রের তিনজন সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গত ২৬ মে চট্টগ্রাম ও খুলনা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে ডিবি লালবাগ বিভাগের কোতোয়ালি টিম। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন– ধাক্কা পার্টির মূল পরিকল্পনাকারী খোকন দাস ওরফে বাইল্যা খোকন, সহযোগী রেজাউল করিম ও ভুক্তভোগীর গতিবিধি রেকি করে কামাল হোসেন। তাদের কাছ থেকে নগদ সাড়ে ৯ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। ওই ঘটনায় এর আগে কোতোয়ালি থানা পুলিশ বাবু ও শাহ আলম নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।
এ বিষয়ে বুধবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলন করে ডিবি লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান। তিনি বলেন, গত ২৬ এপ্রিল বিকেলে ‘মা বুলিয়ান এন্ড সিলভার জুয়েলার্সের’ ম্যানেজারের নির্দেশে কর্মচারী মহিউদ্দিন কদমতলী থেকে ৭০ লাখ টাকা নিয়ে তাঁতীবাজারে আসার পথে ইসলামপুরের নবনারায়ণ লেনের প্রবেশ মুখে পৌঁছামাত্র একজন তাকে ধাক্কা দেয়। পরে ওই ব্যক্তিই উল্টো অভিযোগ করে ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চাই। টাকা বহনকারী মহিউদ্দিন ক্ষমা চেয়ে চলে যেতে চাইলে আশেপাশে ওঁৎ পেতে থাকা ৭-৮ জন ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগে তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকে। একপর্যায়ে তার চোখে আঙুল দিয়ে গুল লাগিয়ে ঢাকা ভর্তি ব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়।
পরের দিন ২৭ এপ্রিল জুয়েলার্সের মালিক আকিদুল ইসলাম ঢাকার কোতয়ালী থানায় ডাকাতির মামলা করে। এরপর আশপাশের শত শত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ, ডিজিটাল তথ্য সংগ্রহ করে থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি লালবাগ ছায়া তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে থানা পুলিশ এবং ডিবি তদন্তে ডাকাতির ঘটনায় পরিকল্পনাকারীদের শনাক্ত করে।
ডিসি মশিউর বলেন, পুরান ঢাকায় বিভিন্ন পাইকারি এবং খুচরা ব্যবসায়ী খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার লেনদেন করেন। মোটা অঙ্কের টাকা পরিবহনের ক্ষেত্রে স্থানীয় পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার নির্দেশনা থাকলেও কাছাকাছি জায়গায় টাকা স্থানান্তর করা হয় বলে তারা পুলিশকে অবগত করেন না। পুরান ঢাকার ওই এলাকাগুলোতে প্রতিদিন শত কোটি টাকার বৈধ লেনদেনের পাশাপাশি অনেকেই হুন্ডির টাকা লেনদেন হয়। ডাকাত ও ছিনতাইকারীরা হুন্ডির ব্যবসায়ীদের টাকা সাধারণত টার্গেট করে।
ডিবির এ কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতির হোতা বাইল্যা খোকন। তিনি কোন ব্যবসায়ী কীভাবে টাকা লেনদেন করে এ সম্পর্কে জানেন। রেজাউল একসময় পুরাতন ঢাকাতেই ব্যবসা করতেন। তারা টার্গেট করা ব্যক্তিকে কিল ঘুষিতে রক্তাক্ত করে চোখে গুল লাগিয়ে ডাকাতি করে আসছিল। ডাকাতির কাজে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করার জন্য তারা কম দামের বাটন ফোনে নিবন্ধনহীন সিম ব্যবহার করে। ঘটনার পরে মোবাইল ও সিম ভেঙে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
গ্রেপ্তার তিন আসামিই ২৭ মে থেকে পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতে রিমান্ডে রয়েছে বলে জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।