ভোলা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
ভোলা বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বরিশাল জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা । ভৌগলিক এবং বেশ কিছু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পোলা বাংলাদেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা।
তার পাশাপাশি দর্শনীয় স্থান এবং বিশেষ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ সহ দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের জন্মভূমি হওয়ার কারণে ভোলা বেশ বিখ্যাত।
আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব ভোলা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সেই সম্পর্কে।
ভোলা জেলার ইতিহাস
ভোলা জেলার ইতিহাস আনুমানিক ৮০০ বছরের পুরনো। ধারণ করা হয় ১২৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো এই এলাকাটি আবিষ্কৃত হয়েছিল। সেই সময় এই জায়গাটিকে একটি খোলা চর বলে ধারণ করা হতো।
১৩০০ সাল থেকে এখানে স্থানীয় কৃষকেরা চাষাবাদ করতে শুরু করে। ১৫০০ সালে এখানে সর্বপ্রথম পর্তুগিজরা এসে ঘাঁটি স্থাপন করে। মূলত সেই সময় থেকে তারা ভোলা জেলার কৃষকদের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপন করতে থাকে। সেই সময় একদল জনগোষ্ঠী “সাদা চামড়া ভগবান”এই মিথটিতে বিশ্বাস করত। তাই তারা ফরাসি বা পর্তুগিজ বনিকদের কিছু বলত না। যদিও একদল জনগোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। তবে পরবর্তীতে কি হয়েছিল সে সম্পর্কে জানা যায়নি। এরই মাঝে ১৬০০ সালের দিকে ব্রিটিশরা ধীরে ধীরে বাংলায় পাড়ি আমাদের থাকে। ফলে পর্তুগিজ এবং অলন্দাজদের দৌরাত্ম কমতে থাকে।
১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে বরিশালকে পূর্ববঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রশাসনিক এলাকায় পরিণত করা হলে এর কার্যালয় স্থানান্তর করা হয় ভোলাতে।
ধারণা করা হয়ে থাকে ভোলার ছোট্ট একটি নদী বেতুয়াতে একজন মাঝি বৈঠা বাইতো। যার নাম ছিল ভোলা গাজী পাটনি। ধারণা করা হয় তার নাম অনুসারেই এই অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে ভোলা। যদিও ভোলা পাটনির আসল নাম নিয়ে কিছুটা দ্বিধা দ্বন্দ্ব রয়েছে।
লোক মুখে প্রচলিত রয়েছে ভোলা গাজি পাটনি জলজ রাক্ষসের মাধ্যমে নিহত হন, সে কারণে পরবর্তীতে তাকে আর অত্র এলাকায় দেখা যায়নি।
ভোলা জেলা কত সালে প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৯৮৪ সালের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হোসেন মোহাম্মদ এরশাদের সময়কালে মহাকুমা প্রথার বিলুপ্তি কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে ভোলা মহাকুমা থেকে জেলায় উন্নীত হয় ।
ভোলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
ভোলা কে বলা হয়ে থাকে “কুইন আইল্যান্ড অফ বাংলাদেশ”। এখানে বেশ কয়েকটি চর অবস্থিত। বাংলাদেশের একমাত্র দ্বীপ জেলা হলো ভোলা।
ভোলায় জন্মগ্রহণ করেন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। এছাড়াও বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের জন্মস্থান ভোলা। সে কারণে ভোলা সারা বিশ্বব্যাপী বেশ সমাদৃত।
ভোলায় মহিষের দুধের দই বেশ বিখ্যাত। খাঁটি মহিষের দুধের দই খেতে হলে আপনাকে ভোলা আসতেই হবে।
ভোলার দর্শনীয় স্থানসমূহ
ভোলার দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল জাদুঘর
মহান মুক্তিযুদ্ধ আত্ম বলিদানকারী বীরশ্রেষ্ঠদের মধ্যে অন্যতম হলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তার অসামান্য সাহসিকতা এবং আত্মত্যাগের কারণে তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধি দেওয়া হয়।
ভোলায় জন্মগ্রহণ করার নিমিত্তে তার স্মৃতি ধরে রাখতে এখানে একটি জাদুঘর তৈরি করা হয়েছে।
নিজাম হাসিনা জামে মসজিদ
বাংলাদেশের যতগুলো মুসলিম স্থাপত্য করা রয়েছে তার মধ্যে নিজাম হাসিনা জামে মসজিদ অন্যতম।
আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর পূর্বে এই মসজিদে এখানে স্থাপন করা হয়। মসজিদটির কারুকার্য যে কাউকে মুক্ত করবে।
মসজিদটি অনেকটা পিরামিড আকৃতির। সাথে রয়েছে অসাধারণ পাথরের নান্দনিক কারুকার্য। তার সাথে রয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়া।
জ্যাকব টাওয়ার
জ্যাকব টাওয়ার ভোলা জেলার চরফ্যাশনে অবস্থিত একটি ওয়াচ টাওয়ার। উচ্চতায় প্রায় ৫০ মিটার । পাথর এবং কাচের সমন্বয় এই ওয়াচ টাওয়ার টি গড়ে তোলা হয়েছে।
মূলত এই সকল ওয়াস টায়ার ব্যবহার করা হতো শহর রক্ষণাবেক্ষণ এবং সমুদ্রের জাহাজের দিক নির্দেশনার কাজে। যদিও এখন বাতিঘর বা ওয়াচ টাওয়ারের খুব একটা প্রচলন নেই তবুও এটি ঐতিহ্যবাহী একটি স্থাপত্য হয়ে ভোলার প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
মনপুরা দ্বীপ
মনপুরা দ্বীপ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ। এটি সমগ্র বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন। শুষ্ক মৌসুমে মনপুরা দ্বীপ দেখতে আসেন অনেক পর্যটক। মনপুরা দ্বীপকে কেন্দ্র করে ২০০৯ সালে “মনপুরা” নামের কালজয়ী একটি চলচিত্র নির্মান করেন চলচিত্র পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম।
ভোলা জেলার বিখ্যাত খাবার কি
ভোলা জেলায় সামুদ্রিক মাছের বেশ প্রতুলতা রয়েছে। এছাড়াও খোলা চালায় মহিষের দুধের দই বেশ বিখ্যাত। খাঁটি মহিষের দুধের দই খেতে হলে ভোলার গ্রাম অঞ্চলগুলোতে যেতে হবে।
সেখানে এখনো মহিষের দুধের দইয়ের প্রচলন রয়েছে। এছাড়াও শহরের ওপর মিষ্টির দোকানগুলোতে পাওয়া যেতে পারে। তার পাশাপাশি সেখানে বিক্রি হয়ে থাকে মহিষের দুধের ছানার পায়েস এবং রসমালাই।
ভোলা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তি বর্গ
ভোলা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে রয়েছেন:
বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যাদের অসামান্য অবদান রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল। তিনি ১৯৪৭ সালের ভোলায় জন্মগ্রহণ করেন। পেশা হিসেবে বেছে নেন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট এর চাকরি।
১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিদর্শনে মোতাবেক শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের সর্বত্র ধীরে ধীরে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে থাকে মুক্তিবাহিনী।
১৯৭১ সালের ১৬ই এপ্রিল। পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের চার নম্বর সশস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থা সরাসরি গুঁড়িয়ে দেওয়ার জন্য আগ্রাসন চালাতে শুরু করে।
ঠিক তার দুইদিন পর অর্থাৎ ১৮ই এপ্রিল প্রচন্ড সাহসী কথার সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিলেন মোস্তাফা কামাল। তবে এক পর্যায়ে তিনি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কর্তৃক বেয়নেটের খোঁচায় নির্মমভাবে নিহত হন। মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি শহীদ হন।
তোফায়েল হোসেন
তোফায়েল হোসেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ। ১৯৪৩ সালে তিনি ভোলায় জন্মগ্রহণ করেন।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় তিনি আঞ্চলিক পরিষদের চার প্রধানের একজন ছিলেন।
১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে তিনি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে দশম জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার পুনরায় ক্ষমতায় এলে তাকে পুনরায় সেই পদে বহাল রাখা হয়।
নলেনি দাস
ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যে কয়জন সোচ্চার ছিলেন তার মধ্যে নলেনি দাস অন্যতম। তিনি ১৯১০ সালে তৎকালীন ভোলা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ব্রিটিশ ভাগাও অভিযানে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সোচ্চার।
আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয় ছিল ভোলা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এই সম্পর্কে। এছাড়াও আর্টিকেলে আরো আলোচনা করা হয়েছে- ভোলা জেলার ইতিহাস,ভোলার দর্শনীয় স্থান,ভোলা জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গদের এবং ভোলা জেলার বিখ্যাত খাবার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আসা করি আর্টিকেল টি আপনাদের ভালো লেগেছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।