ভালবাসায় ভর করে অনেকে যেতে পারে সিমাহীন গন্তব্যে। আবার কখোন কখোন কঠোর পরিশ্রমকেও তুচ্ছ মনে করে অর্জিত হয় ভালোবাসার মূলবোধের দৃষ্টান্ত। বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধতার সময়কে ধরে রাখতে অনেকে মনে মনে ছক সাজিয়ে রাখেন, কেউবা সেই ক্ষনকে উৎসবে পরিনত করেন নিজের সামর্থ অনুযায়ি।
স্বদিচ্ছার অভাব আর আর্থিক অসঙ্গতি কারো কারো জীবন থেকে কেড়ে নেয় সেই বিশেষ দিনগুলোকে। আবার অনেকেই জীবন সঙ্গীর আত্নমর্যাদা বৃদ্ধিতে নিজেকে উজার করে ভালবাসার বর্হি:প্রকাশ করেন।
আজ ঠিক তেমনই এক দম্পত্তির গল্প পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে চাই যারা বৈবাহিক জীবনের ৬১ তম বৎসরে পা দিয়েও নিজেদেরকে নবীন বলে দাবি করার সাহস রাখেন। ৪ জুন ২০২৪ সাল। এই দিনে মো: হাসান আলী ও জাহানারা বেগমের দাম্পত্ত জীবনের শুরু হয় আজ থেকে ৬১ বছর আগে।
তখনকার সময়ে বিয়ে/বিবাহ শব্দকে উচ্চারন করতে গেলেও মুরুব্বিদের অনুমতি লাগবে এমন একটি অঘোষিত প্রথা প্রচলিত ছিল বলেই মনে করে মো: হাসান আলী।
ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, বেলাই বিল, ৩৬৫ কক্ষের ভাওয়াল রাজবাড়ী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, নুহাশ পল্লী, শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ি এই সবই রয়েছে গাজীপুরে। মূলত এই জেলাটি তার নিজ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অনন্য। প্রকৃতির এই রুপরেখায় অসংখ্য সফলতার গল্পও আছে। আছে নিদারুন কষ্টের স্মৃতীগাথা দিনলিপি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা স্থান ধাঁধার চর যেন এই জেলার কাপাসিয়াকে আরো আলোকিত করে তুলেছে। সেই কাপাসিয়াতে ১৯৪০ সালের ৩১ ডিসেম্বরে জন্ম নেয়া মো: হাসান আলীর সাথে কথোপকথোনে কিছু চিত্র উঠে আসে যা পাঠকদের আত্নার খোড়ার যোগাবে বলেই ধারনা।
মানসিক প্রশান্তি আর মনোবলের কারণে পার করেছেন বিবাহিত জীবনের কয়েক যুগ। সাংসারিক কাজের ফাঁকে দুজনে মিলে গড়ে তুলেছেন নিজেদের আপন জগৎ। তুষ্ট করেছেন অভিভাবকদের মানবিক চাহিদা। জাহানার বেগম নিজেকে পরিপূর্ন গৃহিনী করে তুলতে মূল্য দিয়েছেন স্বামী মো: হাসান আলীর সকল সিদ্ধান্তকে। মো: হাসান আলীও স্ত্রীর সকল পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে আরও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছেন বলেই আজ স্বগৌরবে বলতে পারেন ৬১ বছরের সংসার জীবনে আমরা সুখি।
আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ এম এড সম্পন্ন করা মো হাসান আলী ১৯৯৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ত্রাণ ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়ে সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সকল সংবাদ পড়ার প্রতি অতি আগ্রহী এই ব্যক্তিটি দেশের সকল কলামিষ্ট, সাংবাদিকদের সব সময়ই শ্রদ্ধার সাথে স্বরণ করেন। তার মতে, সমাজের সকল অন্যায়-অসঙ্গতি একমাত্র সাংবাদিকরাই তুলে ধরতে পারেন তার সৈনিক কলমের খোচায়।
এদিকে, ময়মনসিংহ জেলার সদরে জন্ম নেয়া জাহানারা বেগমের বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ থেকে এইচ এস সি পাস করার পরে শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটলেও পিতা ইয়াকুব আলী খাঁর প্রচেষ্টায় পারিবারিক শিক্ষার ঘাটতি হয়নি।
বর্তমানে স্বপরিবারে আমেরিকার জর্জিয়ায় বসবাস করা এই দম্পত্তি বলেন, দেশের মায়া আর দেশের ছায়া কেউ ভুলতে পারেনা। যত বিলাসিতায় জীবন কাটুক, তাতে কি? মাটির টানে নীড়ে ফিরতেই হবে।
৫ সন্তানের জনক মো: হাসান আলীর বেড়ে ওঠা গাজীপরের কাপাসিয়ায়। বাবা রওশন আলী সরকারের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত এই মানুষটি তার সকল সন্তানদের করেছেন উচ্চ শিক্ষিত। আজ তার প্রচেষ্টাতে সকল সন্তানই সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠিত। স্বস্তির নিশ্বাস ছেড়ে তিনি পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলেন,
একজন মানুষের জীবনে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আপনাকে চাকরিই করতে হবে এমন ধারনা রাখা ঠিক না। শিক্ষা একটি মানুষকে করবে বিনয়ী। নীতিগত সিদ্ধান্তে রাখবে অটল। ভালো এবং মন্দ প্রকাশের সাহস যোগাবে।
পাঠকদের উদ্দেশ্যে এই দম্পত্তি বলেন, আমাদের ৬১ বছরের সংসার জীবনে ৬১ হাজারেরও বেশি সমস্যা/বিপদ দেখেছি, ভয় পাইনি। আপনার সাহস আর সরলতার সাথে জীবনের সকল সিদ্ধান্ত গ্রহন করুন তাহলেই জীবন হবে উপভোগ্য। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।