কুমিল্লার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদ-নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে ও ভারি বর্ষণে প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে। তবে এসব নদ-নদীর পানি এখন বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকার পানি ধীরে ধীরে কমার সঙ্গে সঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বন্যাকবলিত এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বন্যাকবলিত ১৪ উপজেলার পানি কমতে শুরু করেছে। বরুড়াসহ গুটিকয়েক উপজেলায় বাড়িঘরে পানি নেই। এ ছাড়া বাকি উপজেলাগুলোতে বাড়িঘরের পানি কমায় অনেক স্থানে বানভাসী মানুষ ফিরতে শুরু করেছেন ঘরে। কোনো কোনো এলাকায় এখনো বাড়িঘরের পানি পুরোপুরিভাবে না সরায় অনেকে এখনো রয়েছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে, বেরিয়ে আসছে বন্যার তাণ্ডবে সৃষ্ট নানা ক্ষতচিহ্ন। ফলে বানভাসী মানুষজন এসব ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও শঙ্কায় রয়েছেন। এ যেন বন্যা পরিস্থিতির উন্নতিতে মানুষের নতুন দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, এখনো জেলায় ১০ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। জেলায় মোট ৭২৪টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৭৮ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কেউ কেউ ফিরছেন নিজেদের বাড়ি। আশ্রয়কেন্দ্রসহ বানভাসী মানুষদের চিকিৎসা দিতে ২২৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। বন্যাদুর্গতের মধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে ৩৯ লাখ নগদ অর্থ ও ৮০০ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বানভাসীদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ বিতরণ করেছেন। অন্যদিকে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ জেলায় ১৬০০ টন চাল ও নগদ ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ধীরে ধীরে নামছে বন্যার পানি। এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন অনেক মানুষ। এ উপজেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ এলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সঠিকভাবে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলেও অভিযোগ তুলছেন বানভাসীরা।
অন্যদিকে কোথাও কোথাও বন্যার পানি নামতে শুরু করায় বেরিয়ে আসছে নানা ক্ষতচিহ্ন। যারা আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে বাড়ি ফিরছেন তাদের মধ্যে অনেকের ঘরই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তাদের পুনর্বাসন জরুরি হয়ে পড়েছে। বন্যা-পরবর্তী সময়ে দেখা দিয়েছে পানিবাহিত নানা রোগ। সেক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে বন্যাকবলিতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, জেলার বুড়িচং উপজেলায় বন্যার পানি ধীরে ধীরে নামছে। অনেক বানভাসী ফিরে যাচ্ছেন বাড়িতে। আবার এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে অনেক মানুষ। এ উপজেলার সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না এমন অভিযোগ তুলছেন বানভাসীরা। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় নানা স্থানে বেরিয়ে আসছে ক্ষতচিহ্ন। বন্যায় উপজেলার সড়কগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করে বানভাসীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
জেলার চৌদ্দগ্রামে বন্যার পানি কমছে। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরছেন লোকজন। অনেকের বাড়িঘর হেলে পড়েছে। বাড়িঘর মেরামত নিয়ে তারা নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে রোগবালাই দেখা দিয়েছে। উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের আগুনসাইল গ্রামের রফিক মিয়া বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলাম, বাড়ি এসে দেখি আমার থাকার ঘরটি হেলে পড়েছে। কি করে ঘর মেরামত করে বসবাস করব!
জেলার মনোহরগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে বিস্তীর্ণ এলাকায় খালগুলো ভরাট হয়ে পড়ায় পানি ঠিকমতো নামছে না। অনেকের ঘরবাড়ি হেলে পড়েছে। সিংহভাগ বন্যার্ত মানুষ এখনো ঘরে ফিরতে পারছে না। সরকারি-বেসরকারিভাবে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দি মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। অনেক স্থানে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।
জেলার লাকসাম উপজেলার একটি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের সিংহভাগ এলাকা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে বন্যার পানি অনেকটা কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা অনেকেই বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন। সরকারি-বেসরকারিভাবে বিভিন্ন স্থানে ত্রাণ পৌঁছানো হলেও প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছাচ্ছে না। ডায়রিয়া-আমাশয়, অ্যালার্জিসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দিয়েছে। হেলে পড়েছে অনেকের ঘরবাড়ি। গ্রামের বেশিরভাগ শাখা রাস্তা এখনো পানির নিচে।