যশোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী বলা হয় যশোর জেলাকে। আমার নানা বিষয় নিয়ে ভেবে থাকি। কত কিছু জানার ইচ্ছা থাকলে অনেক সময় তা সম্ভব হয়না। জানা অজানার মধ্যে দিয়ে আমরা আজকে জানবো যশোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জেলা যশোর। যশোর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা।
যশোর কিসের জন্য বিখ্যাত |
যশোর কিসের জন্য বিখ্যাত
যশোর জেলা ফুলের বাগানের জন্যে বিখ্যাত। খেজুর গুড়, খই, ও জামতলার মিষ্টি জন্য যশোর জেলা বিখ্যাত। যশোর জেলা বিখ্যাত কলা ও খেজুর গুড়ের জন্য। এছাড়া যশোরের বিখ্যাত নদী , যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান ইত্যাদি।
যশোর জেলার ইতিহাস
১৭৮১ খ্রিষ্টাব্দে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। নামকরণে দিক থেকে আরবি ‘জসর’ থেকে যশোর শব্দের উৎপত্তি বলে অনেকে মনে করেন। তাছাড়া অন্য একটি সূত্র হতে জানা যায় যে নবপ্রতিষ্ঠিত রাজ্যের নামকরণ হল যশোহর । ‘যশোর’ শব্দটি ‘যশোহর’ শব্দের অপভ্রংশ।
যশোর জেলার সীমানা
যশোরের পশ্চিমে রয়েছে ভারত, পূর্বে রয়েছে নড়াইল জেলা, দক্ষিনে অবস্থিত খুলনা জেলা এবং উত্তরে অবস্থিত যথাক্রমে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলা। আয়তনে এ জেলাটি প্রায় ২৬০৬.৯৪ বর্গ কিমি। এ জেলায় ৮টি উপজেলা রয়েছে।
যশোর সদর উপজেলা
যশোর সদর উপজেলা বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। যশোর সদর উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন রয়েছে।
অভয়নগর উপজেলা
অভয়নগর উপজেলা বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। অভয়নগর উপজেলা একটি পৌরসভা এবং ৮টি ইউনিয়ন ও ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত।
কেশবপুর উপজেলা
কেশবপুর উপজেলা বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। এটি খুলনা বিভাগের অধীন যশোর জেলার অন্তর্গত। এর আয়তন ২৫৮.৫৩ বর্গকিলোমিটার।
যশোর শহর থেকে এর দুরত্ব ৩২ কিলোমিটার। এর উত্তের মনিরামপুর উপজেলা, পূর্বে অভয়নগর উপজেলা, দক্ষিণে ডুমুরিয়া উপজেলা এবং পশ্চিমে কলারোয়া উপজেলা।
চৌগাছা উপজেলা
চৌগাছা বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে যশোর জেলায় এ উপজেলার অবস্থান।
ঝিকরগাছা উপজেলা
ঝিকরগাছা বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত ভারতের সীমান্তবর্তী একটি উপজেলা। এই উপজেলার আয়তন ৩০৮.০৮ বর্গকিলোমিটার। পূর্বে মনিরামপুর উপজেলা, পশ্চিমে শার্শা উপজেলা, উত্তরে চৌগাছা উপজেলা এবং দক্ষিণে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা। মোট ইউনিয়ন ১১ টি, পৌরসভা ১ টি ও গ্রাম ১৭৯ টি।
বাঘারপাড়া উপজেলা
বাঘারপাড়া বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। উত্তরে কালীগঞ্জ উপজেলা ও মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলা, পূর্বে নড়াইল সদর উপজেলা ও মাগুরা জেলার শালিখা উপজেলা, দক্ষিণে নড়াইল সদর উপজেলা ও যশোর সদর উপজেলা এবং পশ্চিমে যশোর সদর উপজেলা। আয়তন ২৭২ বর্গকিমি (১০৫ বর্গমাইল) ও ৯টি ইউনিয়ন গঠিত।
মনিরামপুর উপজেলা
মনিরামপুর বাংলাদেশের যশোর জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।এর আয়তন ৪৪৪.৭৩ বর্গ কিলোমিটার (১৭১.৭৩ বর্গমাইল)। ১টি পৌরসভা, ৯টি ওয়ার্ড, ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদ, ২৪৬টি মৌজা এবং ২৪৯টি গ্রাম নিয়ে গঠিত এই উপজেলা।
উত্তরে যশোর সদর উপজেলা, পূর্বে অভয়নগর উপজেলা, দক্ষিণে কেশবপুর উপজেলা এবং পশ্চিমে সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলা ও ঝিকরগাছা উপজেলা। এখানকার প্রধান নদ-নদী সমুহ: হরিহর, মুক্তেশ্বরী এবং কপোতাক্ষ।
শার্শা উপজেলা
শার্শা উপজেলা বাংলাদেশের যশোর জেলার একটি প্রশাসনিক এলাকা। জেলা সদর হতে ৩১ কিলোমিটার দুরত্বে যশোর-বেনাপোল সড়কের উত্তর পাশ্বে অবস্থিত। আয়তন ৩৩৬.৩৬ বর্গকিমি।
শার্শা উপজেলাটি প্রায় ২২. ৫৪ডিগ্রি ও ২৩. ১৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৮. ৫১ ডিগ্রি ও ৮৯.০১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। শার্শা উপজেলার উত্তরে চৌগাছা উপজেলা, পূর্বে ঝিকরগাছা উপজেলা, দক্ষিণে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলা ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিম বঙ্গ। মোট ৮টি উপজেলা নিয়ে এ জেলাটির প্রশাসনিক কার্যক্রম বিস্তৃত।
যশোর জেলার বিখ্যাত নদ-নদীগুলোর পরিচিতি তুলে ধরা হলো:
যশোর জেলা নদী-
কপোতাক্ষ নদ
কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্যতম বড় নদ। নদীটি চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ভিতর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
এর দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার গড় প্রস্থ ১৫০ মিটার গভীরতা ৩.৫ থেকে ৫ মিটার। এই নদ ৮০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবস্থিত।
বেতনা নদী
বেতনা নদী বা বেতনা-কোদালিয়া নদী বাংলাদেশ-ভারতের একটি আন্তঃসীমান্ত নদী।এর দৈর্ঘ ১৯১ কিলোমিটার এই নদী ঝিনাইদহ, যশোর ও সাতক্ষীরা জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত।
চিত্রা নদী
চিত্রা নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গোপালগঞ্জ জেলার একটি নদী।নদীটির দৈর্ঘ্য ১৭০ কি.মি। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার বিখ্যাত “কমলাকান্তের দপ্তর” গ্রন্থে চিত্রা নদীকে অমর করে রেখেছেন। মাঝারী চারটি নদীর কলকাকলীতে মুখোরিত এই যশোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সেটা বলতে গেলে মনে পড়ে যায় তানভীর মোকাম্মেল পরিচালনায় ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশী যে চলচ্চিত্র নির্মান করা হয় তার নাম এই নদীকে ঘিরেই রাখা হয় “চিত্রা নদীর পারে”। যে ছবিটিতে অভিনয় করেছেন মমতাজউদ্দীন আহমেদ, আফসানা মিমি, তৌকির আহমেদ, রওশন জামিল, সুমিতা দেবী প্রমুখ।
হরিহর নদ
হরিহর নদী বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর জেলার একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৯ কিলোমিটার।
ভৈরব নদ
ভৈরব নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে চুয়াডাঙ্গা জেলা, ঝিনাইদহ জেলা, যশোর জেলা, নড়াইল জেলা ও খুলনা জেলা দিয়ে প্রবাহিত অন্যতম একটি নদী। নদীটির দৈর্ঘ্য ২৪২ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬০ মিটার।
১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দে সময় হতেই যশোর শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠান আছে যশোর জেলায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যশোরে নির্মিত হয়েছে দক্ষিণ বঙ্গের সর্ববৃহৎ আইটি প্রতিষ্ঠান। যশোর জেলার অর্থনীতির দিক থেকে চিংড়ি চাষ, বেনাপোল স্থল বন্দর, নওয়াপাড়া ও গদখালি চিংড়ি চাষে যশোরের অথনীতিকে বেগবান করেছে। যশোরের অর্থনীতির সিংহভাগই আসে মাছ চাষ তথা চিংড়ি রপ্তানী করে। যশোরের অর্থনীতির অন্যতম সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থল বন্দর যা শার্শা উপজেলার সীমান্তবর্তী বেনাপোল পৌরশহরে অবস্থিত। ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের সিংহভাগ এর মাধ্যমে সংঘটিত হয়। ওপারে আছে পেট্রাপোল। এই জেলার মানুষের জীবিকার অন্যতম সূত্র বেনাপোল স্থল বন্দরের কাস্টমস্ ক্লিয়ারিং এজেন্টের কাজ।
আবার নওয়াপাড়াকে যশোরের ব্যবসা বাণিজ্যর প্রাণ কেন্দ্রও বলা হয়ে থাকে। এই এলাকার এবং আশেপাশের উদ্যোক্তাদের কারণে এখানে বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা গড়ে উঠেছে। এছাড়াও নৌপথে আমদানি রপ্তানি হয়ে থাকে। যা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখে ।
যশোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এটার উত্তরে চলে আসে “ফুলের চাষ”। বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী বলা যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিকে। এই অঞ্চলে ফুল চাষ হয় বিপুল পরিমানে । এখানে উৎপাদিত ফুল সারাদেশে সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান
যশোর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহের দিক বিবেচনা করলে সহজেই অনুমান করা যায় যশোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত।
চাঁচড়া শিবমন্দির
যশোর সদর উপজেলার চাঁচড়া গ্রামে চাঁচড়া শিবমন্দির অবস্থিত। রাজা মনোহর রায় ১৯৯৬ খিষ্টাব্দে চাঁচড়া শিবমন্দিরটি নির্মান করেন।
কালেক্টরেট পার্ক
নতুন প্রজন্মের কাছে এখন কালেক্টরেট পার্ক হিসেবে পরিচিত যার পুরোন নাম নিয়াজ পার্ক। যশোরের কালেক্টরেট ভবন চত্বর বর্তমান যশোর জেলার অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদন কেন্দ্র।
বেনাপোল স্থল বন্দর
বেনাপোল বাংলাদেশ ও ভারতের সীমান্তবর্তী একটি গ্রাম যেখানে একটি সীমান্ত ও আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর অবস্থিত। বেনাপোল হতে কলকাতা মাত্র ৮০ কি.মি দূরে অবস্থিত। বাংলাদেশ-ভারত রেল চলাচল বেনাপোল রেলস্টেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক
যশোর শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে সেনানিবাসের শানতলা নামক স্থানে এক মনোরম পরিবেশে বিনোদিয়া ফ্যামিলি পার্ক। বিনোদনের জন্য এখানে রয়েছে মিনি চিড়িয়াখানা, শিশুদের জন্য পার্ক, কৃত্তিম ঝরণা, ছোট্ট নদী, রবীনহুডের ঘর ও ২টি খাবার স্টল রয়েছে ।
ভাসমান সেতু
মণিরামপুর উপজেলার অন্যতম বৃহৎ ঝাঁপা গ্রামের একদিকে কপোতাক্ষ নদ, আর তিন দিকে বিস্তীর্ণ ঝাঁপা বাঁওড় ভাসমান সেতু । ১০০০ ফুট দীর্ঘ ভাসমান সেতু।লাল ও নীল রঙের দৃষ্টিনন্দন দেশের প্রথম ও দীর্ঘতম ভাসমান এ সেতুটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষের যাতায়েত করে। ভাসমান সেতুতে ৮শ’ ৩৯টি ড্রাম ব্যবহৃত হয়েছে । ভাসমান ড্রামের ওপর স্টিলের সিট ফেলে নির্মাণ করা হয়েছে সেতু।
জেস গার্ডেন পার্ক
যশোর শহর থেকে মাত্র ২.৫ কিঃমিঃ দূরে বাহাদুরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম দিকে সুন্দর, নির্মল ও নিরিবিলি পরিবেশে প্রায় ১২ একর জমির উপর জেস গার্ডেন পার্ক অবস্থিত । ১৯৯২ সালে এই পার্কটি প্রতিষ্ঠা করেন মরহুম এ. এস. এম হাবিবুল হক চুনি। জেস গার্ডেন পার্ক অসংখ্য মানুষ এখানে বেড়াতে আসেন।
আশা করি বন্ধুরা এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনারা বুঝতে পেরেছেন যশোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত। আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে ভাল লেগে থাকলেই আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক। এ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।