রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত
জানা অজানার ভীরে স্বদেশকে ভালভাবে দেখতে কার না মন চায়। আবার অনেকে নিজ দেশের চেয়ে ভিন্ন দেশের প্রতি আকৃষ্ঠ হয়ে উঠেন অনেক বেশি। সুযোগ আর সময় দুটোকে পুজিঁ করে অনেকে দেশের সান্নিধ্যে খোঁজ চালিয়ে যান নতুনত্বের। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায় আপনি যদি দেশকেই ভালভাবে জানতে না পারেন তাহলে বিশ্বকে দেখার আগ্রহ পাবেন কিভাবে। তাই আমরা আজ জেনে নেব দেশের সর্বউত্তরের রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এই নিয়ে আলোচনা করবো।
রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত |
জেনে নেওয়া যাক রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত?
মূলত রংপুর জেলাটি তামাক, ইক্ষুর জন্য বিখ্যাত। এই রংপুর জেলা মূলত সারাদেশ জুড়ে তামাকের জন্য বিখ্যাত। এইখানকার উৎপাদিত তামাক দিয়ে সারা দেশের চাহিদা পূরণ করা হয়। এছাড়াও এখানে প্রচুর পরিমাণ ধান-আলু-পাট ও হাড়িভাঙ্গা আম উৎপাদিত হয়। এই হাড়িভাঙ্গা আম স্থানীয় বাজারের চাহিদা মেটানোর পরেও সারাদেশের চাহিদা পুরনেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে থাকে। এই জেলার সহজ-সরল প্রকৃতির মানুষেরা সদাই হাস্বোজ্বল থেকে সহজেই সবাইকে আপন মনে করে।
এছাড়াও জেলাটি তাজহাট রাজবাড়ী, ভিন্নজগত, ঘাঘট প্রয়াস পার্ক, চিকলির পার্ক, তিস্তা সড়ক ও রেল সেতু, মিঠাপুকুর শালবন সহ নানান দর্শনীয় স্থানের কারণে সবার কাছে অধিক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
আমারা জানি সবুজ শ্যামলিমায় ঘেরা এই দেশে ৮টি বিভাগ ও ৬৪ টি জেলা রয়েছে। এর মাঝে রংপুর একটি জেলা। রংপুর বিভাগের অন্যতম জেলা হলো রংপুর জেলা। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর জেলা অবস্থিত। আয়তন ২,৩০৮ বর্গকিলোমিটার রয়েছে। রংপুর বিভাগে আটটি জেলা রয়েছে। আটটি উপজেলা, ৭৬ টি ইউনিয়ন, ১৪৫৫টি মৌজা এবং ১ টি সিটি কর্পোরেশন, ৩টি পৌরসভা নিয়ে রংপুর জেলা । রংপুর জেলা কেন এবং কিসের জন্য বিখ্যাত? রংপুর জেলা তামাকের জন্য বিখ্যাত একথার একাত্বতা প্রসোন করতে হলে আপনাকে আমাদের আর্টিকেলটি অবশ্যই পড়তে হবে। তাহলেই জানতে পারবেন “রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত”।
রংপুর জেলার ইতিহাস
রংপুরের নামকরনের সঠিক তথ্য আজও অজানা ইতিহাসের পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকেই কালক্রমে এই নামটি এসেছে রংপুর। তবে লোকমুখে জানা যায়, ভারত উপমহাদেশে ইংরেজরা নীলের চাষ শুরু করে। এইখানে প্রচুর পরিমাণে নীলের চাষ করা হতো। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামেই চিনতো। কালের বিবর্তনে রঙ্গ থেকে রংপুর নামকরণ করা হয়।
রংপুর জেলার উপজেলা
রংপুর জেলার মোট ৮টি উপজেলা আছে। এই উপজলার গুলোর নাম হলো, যথাঃ
১. কাউনিয়া, ২.গংগাচড়া, ৩.তারাগঞ্জ, ৪. পীরগঞ্জ, ৫.পীরগাছা, ৬.বদরগঞ্জ,
৭. মিঠাপুকুর, ৮. রংপুর সদর।
রংপুর দর্শনীয় স্থান
রংপুর জেলার বহু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এই রংপুর জেলার দশনীয় স্থানের দিক বিবেচনা করলে অনায়াসেই বোঝা যায় রংপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত।
ভিন্নজগত
১শ’ একর জমিতে গড়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রটি সারাক্ষণ নানা জাতের পাখির কোলাহলে মুখরিত থাকে। নাম যার “”ভিন্নজগৎ। প্রতিটি গাছে গাছে দেখা যায় নানান প্রজাতির পাখি। এখানে শোভা পাচ্ছে দেশি-বিদেশি হাজারও বৃক্ষ।
বলতে গেলে “রংপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত” তার উত্তরটা এখানেই পাওয় সম্ভব।
ভিন্নজগতের প্রধান ফটক পার হলেই বিশাল লেক ঘেরা নয়নাভিরাম দৃশ্য। সামনে পড়বে লোহার ১টি ব্রিজ, পার হলেই ভিন্নজগতের ভেতর যেন আরেকটি ভিন্নজগত। দেশের প্রথম প্লানেটোরিয়াম। রয়েছে রোবট স্ক্রিল জোন, স্পেস জার্নি, জল তরঙ্গ, সি প্যারাডাইস, আজব গুহা, নৌকা ভ্রমণ, শাপলা চত্বর, বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভাষা সৈনিকদের ভাস্কর্য, ওয়াক ওয়ে, থ্রিডি মুভি, ফ্লাই হেলিকপ্টার, মেরি গো রাউন্ড, লেক ড্রাইভ, সুইমিং পুল স্পিনিং হেড, মাছ ধরার ব্যবস্থা।
একই সঙ্গে রয়েছে অন্তত ৫শ’টি পৃথক দলের পিকনিক করার ব্যবস্থা। রয়েছে অন্তত ৮/৯শ’ গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধা। কটেজ ৭টি। থ্রি স্টার মডেলের ড্রিম প্যালেস। জলাশয়ে রয়েছে নৌভ্রমণের সুবিধা।
তাজহাট রাজবাড়ী
দেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই রয়েছে কোন না কোন জমিদার বাড়ি। কারণ হিসেবে বলা ইংরেজ শাষনামলে জমিদারি প্রথা চালু থাকাতে এই জমিদার বাড়ির সৃষ্টি। তখন অবশ্য জমিদারদের কদরও ছিলো অনেক বেশিই। এমনকি চটি বা পাদুকা পায়ে দিয়ে কেউ জমিদার বাড়ির সামনে দিয়ে হেটে যেতেও পারতেন না। সেই রকম একটি জমিদার বাড়ির নাম তাজহাট জমিদার বাড়ি।
জমিদার বাড়ির সামনে বিশাল আকৃতির ৪টি পুকুরই বলে দেয় একসময় এই জমিদার বাড়ির গাম্ভির্যের কথা। বর্তমান তাজহাটে বাজার হতে উত্তর দিক দিয়ে প্রধান ফটক অতিক্রম করে ক্রমান্বয়ে পশ্চিমে কয়েকশ’গজ পেরিয়ে জমিদার বাড়ির প্রধান প্রবেশ পথে আসা যায়।
মান্নানলাল রায় সুদূর পাঞ্চাব হতে রংপুরের বিশিষ্ট সমৃদ্ধ স্থান মাহিগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য আসলেও প্রাচীন রঙ্গপুরের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, মান্নানলাল রায় রঙ্গপুরের মাহিগঞ্জে এসেছিলেন মূলত হীরা, জহরত ও স্বর্ণ ব্যবসার জন্য। প্রথম দিকে নানা ধরণের নামী দামী হীরা, মানিক জহরতখচিত তাজ বা টুপির ব্যবসা করেছিলেন । উক্ত তাজটুপি বিক্রির লক্ষে এখানে হাট বসতো। যা পরবর্তীতে খুবই পরিচিতি লাভ করে এবং এই তাজহাটকেই কেন্দ্র করে এই জমিদারবাড়ীর নামকরণ করা হয় আর নাম রাখা হয় তাজহাট জমিদার বাড়ি।
এই তাজহাট জমিদার বাড়িটির উত্তর দক্ষিন ও পূর্ব পশ্চিমের অংশের পরিমাপ ১২৩ফিট*১২০ফিট লম্বা। এই বাড়িতে দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য তিনটি অভিগমন পথ রয়েছে তার মাঝে অভিগমন পথটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত। সবকটি অভিগমন পথের প্রতিটি ধাপ সুন্দরমসৃণ সাদা ও ছাই রংয়ের পাথর দ্বারা মোড়ানো। বারান্দাটির সম্পূর্ণ মেঝে অনুরূপ পাথরে মোড়ানো প্রথম তলার ছাদ নির্মাণে বড় বড় লোহার বীম ও লোহার ফালি ব্যবহার করা হয়েছে। এতসব পর্যালোচনা করলে সহজেই অনুমেয় যে রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত।
চিকলির পার্ক
রংপুর জেলার হনুমান তলা এলাকায় রয়েছে শত বছরের প্রাচীন চিকলী বিল যা চিকলী পার্ক নামেও অনেক পরিচিত সবার কাছে। এই বিলে/পার্কে শীতকালে অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত থাকে এর জলাধার। সংরক্ষিত করা পুরো এলাকাটি বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তুলেছে সিটি কর্পোরেশন।
বিলে ঘোরার জন্য আছে স্পীড বোট। গত কয়েক বছরে ভ্রমণপিপাসুদের নজর কেড়েছে জায়গাটি। দুরদুরান্ত থেকে দল বেঁধে বনভোজন করতে আসেন অনেকেই। আর এ কারনেই রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এই প্রশ্নের সহজেই চলে আসে।
রংপুর জেলার নদ-নদীসমূহ
রংপুর জেলার প্রধান ৫ টি নদী বয়েগেছে সেগুলো তিস্তা, যমুনেশ্বরী, ঘাঘট, আখিরা ও করতোয়া নদী।
আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক কাজে লেগেছে। আর আসা করি আপনারা জানতে পেরেছেন রংপুর কিসের জন্য বিখ্যাত। আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।