রাজশাহী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
আপনার মনে কী প্রশ্ন আছে যে, রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত? অনেকে মনে প্রশ্ন থাকতে পারে এই বিষয়ে। তাই আজকে আমরা রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত এই নিয়ে একটি সুন্দর আর্টিকেল লিখছি। যাতে সাধারণ মানুষের কিছুটা হলেও উপকারে আসে।
রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত |
রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত
রাজশাহী জেলার আম, রাজশাহী রেশমী কাপড়, খেজুরের গুড়, রাজশাহী সিল্ক শাড়ি, এবং শংকর ক্ষীরের চমচমের এর জন্য বিখ্যাত রাজশাহী জেলা।
এছাড়া ও রাজশাহী জেলা সৌন্দর্য ও রাজশাহী দর্শনীয় স্থান সমূহের জন্য এই জেলা কে আরো বিখ্যাত ও জেলাকে করেছে আরো সমৃদ্ধ।
রাজশাহী জেলা সম্পর্কে তথ্য
রাজশাহী জেলা বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের বিভাগীয় একটি শহর। দেশের সকল বিভাগীয় শহরের তালিকায় রাজশাহীর স্থান এক অনন্য উচ্চতায়। পদ্মার পাড় ঘেসে গড়ে ওঠা এই জেলায় রয়েছে দেশের সকল জেলার চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু বৈশিষ্ট যা না দেখলে সত্যিই বুঝতে পারবেন না। কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেওয়া যাক কি সেই অপার সম্ভাবনা ও না দেখা বিষয় আছে যা এই জেলাকে করেছে সমৃদ্ধ। আর এও জেনে নেয়া যাবে কিসের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী জেলা।
অবস্থান গত দিক থেকে রাজশাহী দেশের উত্তর পূর্বের একটি জেলা। এই জেলার প্রথম পরিচয় বলতে গেলে সারাবিশ্বে যার পরিচিতি ছড়িয়ে পড়েছে সেটা হলো আম। এরপরে অনেক বিষয় আছে যা রাজশাহী জেলাকে সবার কাছে করেছে আরও সমাদৃত।
রাজশাহীতে প্রাচীন বাংলার কয়েকটি রাজধানী শহর অবস্থিত ছিল এক সময়ে। সেখানে লক্ষ্ণৌতি বা লক্ষণাবতী, মহাস্থানগড়ের নাম উল্লেখযোগ্য।
কি নামে ডাকা হতো রাজশাহী জেলাকে
প্রতিটি জেলা শহরের নামের পেছনে কোন না কোন ইতিহাস থাকে। রাজশাহী জেলার ক্ষেত্রে তার ব্যাত্বয় ঘটেনি। রাজশাহীকে অনেকে তার আকর্ষণীয় রেশমীবস্ত্র, আম, লিচু এবং মিষ্টান্নসামগ্রীর জন্য প্রসিদ্ধ বলে মনে করলেও মূলত রেশমীবস্ত্রের কারণে রাজশাহীকে রেশম নগরী নামেও ডাকা হতো।
রাজশাহী জেলা ইতিহাস
প্রাচীন ও মধ্যযুগে এই রাজশাহী জেলা ছিল তখনকার বাংলার পুন্ড্র সাম্রাজ্যের অংশ। সেন বংশের রাজা বিজয় সেনের সময়ের রাজধানী বর্তমান রাজশাহী শহর থেকে মাত্র ৯ কিমি দূরে অবস্থিত ছিল। মধ্যযুগে বর্তমান রাজশাহী পরিচিত ছিল রামপুর বোয়ালিয়া নামে। সেই সূত্র ধরেই রাজশাহী শহরের একটি থানার নাম আজও বোয়ালিয়া।
আধুনিক যুগে স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে রাজশাহী শহরকে কেন্দ্র করে ১৭৭২ সালে জেলা গঠন করা হয়। ১৮৭৬ সালে গঠিত হয় রাজশাহী পৌরসভা গঠনের পরই ১৯৯১ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনে রূপান্তরিত হয়।
ব্রিটিশদের রাজত্বেও বর্তমান রাজশাহী জেলাটি বোয়ালিয়া নামে পরিচিত ছিল। তখন এটি ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও আসাম অঞ্চলের অর্ন্তগত রাজশাহী জেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র। রাজশাহীকে সে সময়ে রেশম চাষের প্রধান কেন্দ্র হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছিল। তখন রাজশাহীতে একটি সরকারি কলেজ ও রেশম শিল্পের জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। সেসময় থেকে দেশবিভাগের পূর্ব পর্যন্ত পদ্মা নদীর উপর দিয়ে প্রতিদিন যাত্রীবাহী স্টিমার চলাচল করত।
রাজশাহী অজানা কাহিনী
১২ জুন ১৮৯৭ সালের ভয়াবহ ভূমিকম্পে রাজশাহী শহরের বেশীরভাগ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরবর্তীতে অনেক ভবন আবার নতুন করে স্থাপিত হয়।
রাজশাহী জেলার বিশ্ববিদ্যালয়
মোট ৩ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে রাজশাহী জেলা
১. রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
২. রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
৩. রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থান
মহাস্থানগড়
মহাস্থানগড় প্রাচীর বেষ্টিত এবং এর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন আমলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সমূহ। পূর্বে এর নাম ছিল পুণ্ড্রবর্ধন বা পুণ্ড্রনগর। প্রাচীন কালের এক সময় মহাস্থানগড় বাংলার রাজধানী ছিল। মহাস্থানগড়ে মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন সাম্রাজ্যের প্রচুর নিদর্শন সমূহ ও বিভিন্ন প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন দেখা যায়।
মহাস্থানগড় |
বাঘা মসজিদ
রাজশাহী জেলা শহর হতে প্রায় ৪১ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে জেলার বাঘা উপজেলায় অবস্থিত এই ঐতিহাসিক মসজিদ বাঘা মসজিদ। এই মসজিদের বয়স প্রায় ৫০০ বছরের মতো। প্রাচীন কালের সুলতান নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহ ১৫২৩ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠিত করেন।
বাঘা মসজিদ |
পুঠিয়া রাজবাড়ী
পাঁচআনি জমিদারবাড়ী বা পুঠিয়া রাজবাড়ী হচ্ছে প্রাচীন আমলের মহারানী হেমন্তকুমারী দেবীর বাড়ী। রাজশাহী জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ী অন্যতম। ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে রানী হেমন্তকুমারী দেবী আকর্ষনীয় সৌন্দর্যে ইউরোপীয় স্থাপত্যরীতিতে এই আয়তাকার দ্বিতল বাড়ীটি বর্তমান রাজবাড়ীটি নির্মাণ করা হয়।
পুঠিয়া রাজবাড়ী |
শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা
রাজশাহী জেলা শহর জিরোপয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় ৩ কি.মি. কোর্ট এর দিকে, প্রধান রাস্তার উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা। এছাড়া এই শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা কে রাজশাহী কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা ও বলা হয়ে থাকে।
শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানা |
শিশু পার্ক
বাচ্চাদের জন্য শিশু পার্ক রাজশাহী শহরের একটি অন্যতম বিনোদন কেন্দ্র। রাজশাহী জেলা সদরের নওদাপাড়া বড় বনগ্রামে বর্তমানে এই শিশু পার্কটি অবস্থিত। এই পার্ক টিকে শহীদ জিয়া শিশু পার্ক ও বলা হয়ে থাকে। ২০০৬ সালের দিকে পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে।
শহীদ জিয়া শিশু পার্ক |
জেনে নিন রাজশাহী জেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক
বিভাগীয় এই জেলা শহরের রাস্তাগুলো অনেক প্রাচীন ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আজও টিকে আছে তন্মদ্ধে জে গ্রেটার রোড, শেরশাহ্ রোড, কাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গির রোড, স্টেশন রোড, কাজী নজরুল ইসলাম স্বরণী, বিমান-বন্দর রোড, বেগম রোকেয়া রোড, দোশর মন্ডল রোড, রাণীবাজার-টিকাপাড়া রোড, সাহেব বাজার জিরোপয়েন্ট-নিউমার্কেট নতুন সড়ক উল্লেখযোগ্য।
বাকিগুলোর নাম তো জানতেই হবে, চলুন বাকি সড়কগুলো হচ্ছে, তালাইমারি রোড, টিবি রোড, রাজশাহী সিটি বাইপাস সড়ক, আলিফ লাম মিম ভাটা-বাইপাস সড়ক, ক্যান্টনমেন্ট রোড, টিটিসি রোড, প্যারা মেডিকেল রোড, মহিলা কলেজ রোড, সিএনবি রোড, পুরাতন নাটোর রোড, মালোপাড়া-রাণীবাজার ভায়া সষ্টিতলা কানেকটিং রোড, ভদ্রা-কামরুজ্জামান চত্বর রোড। এছাড়াও আরও রাস্তা রয়েছে। উপরে উল্লিখিত রাস্তাসমূহ ৪ লেন ও মাঝখানে ডিভাইডার রয়েছে।
রেলওয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই জেলার বৈশিষ্ট সত্যিই আলাদা। রাজশাহী থেকে অনেকগুলো আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেন সার্ভিস রয়েছে । এসব ট্রেন এ করে ঢাকা, খুলনা, চিলাহাটি, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, কুষ্টিয়া,পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, গাজিপুর, সৈয়দপুর, যশোর যাওয়া যায় ।
রাজশাহী শহরে ৩ টি রেলওয়ে স্টেশন রয়েছে- রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন,বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন, ও কোর্ট স্টেশন।
যদি বলা হয় রাজশাহী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত তাহলে বলতেই হবে রাজশাহীতে এখন প্রায় ১৫টি সফটওয়ার ফার্ম আছে। তাছাড়া এখানে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য প্রায় ১০টি ট্রেনিং সেন্টার আছে, যা দিন দিন বাড়ছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষিত বেকারদের কর্মসংস্থান তৈরতে এই জেলার ভূমিকা সতিই অনস্বীকার্য।
আশা করি আজকে এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পেরেছেন রাজশাহী কিসের জন্য বিখ্যাত। আসা করি আপনাদের উপকারে এসেছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।