রাজবাড়ী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলির ভেতরে রাজবাড়ী জেলাটি বিশেষ ভূমিকার দাবিদার কেন? সেই বিষয়েই আজ আমরা আপনাদের জানানোর জন্য নিয়ে এসেছি রাজবাড়ি জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত।
এই জেলাটি বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলের ঢাকা বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এই রাজবাড়ি জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সেই বিষয়ে জানতে হলে অবশ্যই এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়তে হবে।
কালের বিবর্তনে রাজবাড়ি জেলার ইতিহাস
বর্তমান রাজবাড়ী জেলাটি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৬৫ সালে ইংরেজরা বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যার দেওয়ানী লাভের পর উত্তর পশ্চিম ফরিদপুর অঞ্চল রাজশাহীর জমিদারীর অন্তর্ভুক্ত ছিল।
নাটোরের রাজার জমিদারী চিহ্ন হিসেবে রাজবাড়ী জেলার বেলগাছিতে রয়েছে স্নানমঞ্চ, দোলমঞ্চ। পরবর্তীতে এ জেলা এক সময় যশোর জেলার অংশ ছিল। ১৮১১ সালে ফরিদপুর জেলা সৃষ্টি হলে রাজবাড়ীকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এই জেলাটির বর্তমান উপজেলাগুলো অতীতে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজবাড়ি জেলাটির পাংশা থানা এক সময় বৃহত্তর পাবনা জেলার অংশ ছিল। ১৮৫৯ সালে পাংশা ও বালিয়াকান্দিকে নবগঠিত কুমারখালী মহকুমার অধীনে নেয়া হয়।
১৮০৭ সালে ঢাকা জালালপুরের হেড কোয়ার্টার ফরিদপুরে স্থানান্তর করা হয় এবং পাংশা থানা ফরিদপুরের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৮৫০ সালে লর্ড ডালহৌসির সময় ঢাকা জালালপুর ভেঙ্গে ফরিদপুর জেলা গঠিত হলে গোয়ালন্দ তখন ফরিদপুরের অধীনে চলে যায়। সে সময় পাংশা, বালিয়াকান্দি পাবনা জেলাধীন ছিল।
১৯৮৩ সালে সরকার প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে প্রতিটি থানাকে মান উন্নীত থানায় রূপান্তরিত করলে রাজবাড়ীকে মান উন্নীত থানা ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৩ সালের ১৮ই জুলাই থেকে সরকার অধ্যাদেশ জারী করে সকল মান উন্নীত থানাকে উপজেলায় রূপান্তরিত করার ফলে রাজবাড়ী উপজেলা হয়। গোয়ালন্দ মহকুমার প্রশাসনিক দপ্তর রাজবাড়ীতে থাকায় অবশেষে ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ সকল মহকুমাকে জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সে থেকে রাজবাড়ী জেলায় রূপান্তরিত হয়।
রাজবাড়ি জেলার নামকরণের ইতিহাস
রাজবাড়ী জেলাটি রাজার বাড়ীর নামানুসারে নামকরণ করা হয়েছে এ বিষয়ে তেমন কোন সন্দেহের আবকাশ নেই। রাজবাড়ীর সেই রাজা আর নেই। কিন্তু রাজার সেই ঐতিহ্য ধারণ করে আছে আজকের রাজবাড়ি জেলাটি।
পদ্মা, হড়াই, গড়াই, চন্দনা, কুমার আর চত্রা নদীগুলো একসময় পলিবাহিত ‘বাংলার প্রবেশদ্বার’ বলে পরিচিত গোয়ালন্দ মহকুমা আজকের রাজবাড়ী জেলা।
এল.এন. মিশ্র প্রকাশিত ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে ক্যালকাটা ১৯৩৫’ তে একশ নয় পৃষ্ঠায় রাজবাড়ী জেলা সম্বন্ধে যে সকল তথ্য পাওয়া যায় তাতে দেখা যায় যে, ১৬৬৬ সালে নবাব শায়েস্তা খান ঢাকায় সুবাদার নিযুক্ত হয়ে আসেন।
রাজবাড়ি জেলার ভৌগোলিক সীমানা
ভৌগোলিক সীমানা বলতে গেলে রাজবাড়ীর উত্তরে পদ্মা নদী , পশ্চিম থেকে পূর্বে পদ্মা ও যমুনার সঙ্গমস্থল দৌলতদিয়ার সামান্য উত্তরে আরিচা ঘাট । পদ্মার অপর প্রান্তে পাবনা ও মানিকগঞ্জ । দক্ষিণে পদ্মার শাখা নদী গড়াই নদী, গড়াই-এর ওপারে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলা । পূর্বে ফরিদপুর ও পশ্চিমে কুষ্টিয়া । রাজবাড়ীকে ঘিরে পদ্মা , চন্দনা , গড়াই নদী ও হড়াই নদী, কুমার নদী ও চিত্রা নদী ।
২৩.৪৫° উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯.০৯° পূর্ব দ্রাঘিমাংশে পূর্ব-পশ্চিমে দীর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে প্রশস্ত এ জেলার মোট আয়তন ১,০৯২.২৮ বর্গ কিলোমিটার ।
রাজবাড়ি জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
রাজবাড়ী জেলাটি বিখ্যাত হওয়ার মূল মন্ত্রই হচ্ছে চমচম। এই জনপ্রিয় মিষ্টিটি প্রস্তুত করেছিলেন ভাদু সাহা নামক একজন ব্যাক্তি। যিনি এই চমচমের জন্য সারা দেশে নিজে বিখ্যাত হয়ে বিখ্যাত করে গেছেন রাজবাড়িকেও। এটি সাধারণত হালকা রসালো একটি লম্বাকৃতির মিষ্টি। রাজবাড়ী জেলার এই বিখ্যাত চমচম টি দেশের অনন্যা চমচম। গুনে মানে ও স্বাদেও আলাদা। তাছাড়া রাজবাড়ীর রসমালাই ও অনেক সুস্বাদু হয়ে থাকে।
টাঙ্গাইলের মতো রাজবাড়ীর চমচম স্বাদের জন্য বিখ্যাত। চমচম অনেক সুস্বাদু। রাজবাড়ীর শংকরের খীরচমচম আলাদাভাবে উল্লেখ করতে হবে। পোড়া ইটের রঙ চমচম এর উপরে খিরের প্রলেপ দেওয়া হয় এবং এটিকে আরও সুস্বাদু করে তোলে।
রাজবাড়ীর চমচম আমাকে আমার একজন বন্ধু ঢাকায় নিয়ে এসে আমাকে খাইয়ে ছিলেন। আমি যখন প্রথম রাজবাড়ীর চমচম ও রসমালাই খাই তখন এই বুঝেছি কি চমৎকার স্বাদ।
এই জেলার প্রশাসনিক এলাকাসমূহ
রাজবাড়ী জেলায় সর্বমোট ৪২টি ইউনিয়ন, ৩ টি পৌরসভা ও ৫টি উপজেলা রয়েছে। [২] উপজেলাগুলো হচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা
গোয়ালন্দ উপজেলা
পাংশা উপজেলা
বালিয়াকান্দি উপজেলা
কালুখালী উপজেলা
প্রসিদ্ধ স্থান
মেইন স্ট্রিট
প্রধান সড়ক, রাজবাড়ী
রাজবাড়ি সরকারি কলেজ
ধুঞ্চি গোদার বাজার (পদ্মানদী)
পদ্মা নদীর গোদার বাজার,রাজবাড়ী অংশে সূর্যাস্ত
শাহ পাহলোয়ানের মাজার
আবু হেনা পার্ক বাহাদুরপুর, পাংশা, রাজবাড়ী
সমাধিনগর মঠ – বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়ন
রথখোলা সানমঞ্চ – বেলগাছি
নীলকুঠি
মীর মশাররফ হোসেন স্মৃতি কেন্দ্র – পদমদী
দৌলতদিয়া ঘাট
চাঁদ সওদাগরের ঢিবি
কল্যাণদিঘি
গোয়ালন্দ ঘাট
মুকুন্দিয়া জমিদার বাড়ি
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব
মীর মোশাররফ হোসেন ঔপন্যাসিক, নাট্যকার ও প্রাবন্ধিক
রশিদ চৌধুরী চিত্রশিল্পী এবং অধ্যাপক
রোকনুজ্জামান খান লেখক ও সংগঠক ছিলেন
রোজিনা (অভিনেত্রী)
মোহাম্মদ এয়াকুব আলী চৌধুরী
সোহেলী আক্তার একজন বাংলাদেশী মহিলা ক্রিকেটার
খবিরুজ্জামান – বীর বিক্রম
আবু হেনা চৌধুরী – সাবেক নির্বাচন কমিশনার বাংলাদেশ
কাঙালিনী সুফিয়া,বালিয়াকান্দি
আজ আমরা যে জেলাটির আদ্যোপান্ত নিয়ে আপনাদের কাছে হাজির হয়েছি আশা করি তার শতভাগই আপনাদের উপকারে এসেছে। এই আর্টিকেলটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে নিউ সিজন ২৪ ডট কমের সাথেই থাকুন।