Norail-Jela-kiser-jonno-Bik

চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত । Norail Jela kiser jonno Bikkhato?

ধর্ম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

নড়াইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত

দেশের দক্ষিনাঞ্চলের খুলনা বিভাগের একটি জেলা নড়াইল। নড়াইল ১৯৬১ সালে যশোর জেলার অধীনে মহাকুমা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে পরে ১৯৪৮ সালের ১লা মার্চ নড়াইলকে জেলায় রুপান্তরিত করা হয়। তিনটি উপজেলা একটি থানা নিয়ে গঠিত এই জেলাতে রয়েছে নানান ইতিহাস।

 

নামকরণ, শিল্পসাহিত্য, জলবায়ু, গ্রামীনপ্রথা, অর্থনীতি, জনসংখ্যা, শিক্ষাপ্রাগৈতিহাসিক স্থাপনায় সমোজ্বল এই জেলাতে ছিল ধর্ম প্রচারের উত্তরসূরীদের বসবাস। বন্ধুরা আজ আমরা জানবো নড়াইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত।

 

নড়াইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত । Norail Jela kiser jonno Bikkhato?

 

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধেও এই জেলার জনসাধারণের ত্যাগের কথা কেউ অস্বিকার করতে পারবে না। কারন হিসেবে বলা যায় মুক্তিযুদ্ধে শুধু এই জেলারই মুক্তিযোদ্ধা হাজারের বেশি। দেশের জন বীরশ্রেষ্ঠের মধ্যে একজন নড়াইলের কৃতি সন্তান মরহুম ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ।

নড়াইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সেই বিষয়ে জানতে হলে আমাদের নিচের কয়েকটি পয়েন্ট ঠিকঠাক পড়তে হবে, তাহলেই ব্যাপারটাপানিরমতোপরিস্কার।

চলুন তাহলে দেখে নেয়া যাক কিসের জন্য বিখ্যাত নড়াইল।

প্রথমত; সরলতা আরভাষামাধুয্যতার কারণে এই জেলার শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই কেমন যেন আন্তরিকতার শিক্ষায় বেড়ে ওঠে। পরপোকারি হওয়াটা এই জেলার মানুষের যেন মৗলিক বিষয়। গ্রামীন জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে ফুঠে ওঠে আদি সংস্কৃতির ছাপ। কবির কবিতায় ঘিরে থাকে বাঙলার রুপ আর অলংকরণে ব্যস্ত থাকে এই জেলারই কৃষক কিষানীর জোর প্রচেষ্টা।

কোন খাবারের জন্য নড়াইল জেলা বিখ্যাত এটা জানতে হলে নিচের অংশটি পড়তে হবে বন্ধুরা

প্রতিটি জেলার ন্যায় নড়াইল জেলাও কিছু খাবারের জন্য ক্যাতি রয়েছে। যার মাঝে আছে পেড়ো সন্দেশ, খেজুরের গুড় এবং খেজুরের রস। তাছাড়াও এই জেলাতেই আমাদের দেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার বাড়ি।

এই জেলার পরিচয় বহন করে প্রায় সারা দেশই।

তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য : মাসরুর-উল-হক সিদ্দিকী:-বীরউত্তম, এস এম সুলতান-বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, নূরমোহাম্মদ শেখ-বীরশ্রেষ্ঠ, শরীফখসরুজ্জামান, বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাবেকসংসদ সদস্য (1991-2001), নড়াইল ২, মাশরাফি বিন মর্তুজা – সাবেকঅধিনায়ক,বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল, নড়াইল – ২ আসনের সংসদ সদস্য, ড.রথীন্দ্রনাথ বোস, চারণকবি মোসলেমউদ্দিন, কবিয়ালবিজয় সরকার, ডাঃ নীহার রঞ্জন গুপ্ত, কমলদাশগুপ্ত, শেখ আব্দুস সালাম- সর্বকনিষ্ঠশহীদ বুদ্ধীজীবি, জমিদারঅমৃতনাল দাসসহ অনেকের জন্য নড়াইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এই প্রশ্নের উত্তরটা অনায়াসেই চলে আসে। 

নড়াইল জেলার দর্শনীয় স্থান

নড়াইলজমিদার বাড়ি

নড়াইলে জমিদার বংশের পথচলা শুরু হয় ১৭৯১ সালের দিকে রূপরাম রায়ের সান্নিধ্যে। তখন নড়াইল জেলা ছিল নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর আওতায় একটি তালুকি বা তালুকদার। তবে রূপরাম রায়ের ছেলে কালী শঙ্কর রায় মূলত তালুকদার থেকে স্বতন্ত্রভাবে জমিদারী শুরু করেন। তাই তাকেই এই জমিদার বংশের মূল প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে ধরা হয়। কালী শঙ্কর রায় ও তার পিতা রূপরাম রায় দুইজনই নাটোর রাজ সরকারের কর্মচারী ছিলেন। ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর লর্ড কর্নওয়ালিশ যখন ১৭৯৩ সালে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা চালু করেন এবং যার পরিপ্রেক্ষিতে নাটোরের রানী ভবানীর জমিদারীর অনেক খাজনা বাকী থাকায় তা নীলামে বিক্রি হতে থাকে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে নাটোরের রানী ভবানীর কর্মচারী কালী শঙ্কর রায় নীলামে বিক্রীত জমিদারী ক্রয় করতে থাকেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় তিনি স্বতন্ত্রভাবে নড়াইল এলাকায় তার জমিদারীর সদরদপ্তর করে জমিদারী পরিচালনা করতে থাকেন। পরবর্তীতে জমিদার কালী শঙ্করের নাতীরা নীল চাষের ব্যবসা করে আরো বেশি ধন-সম্পদের মালিক হন। এই জমিদার বংশধররা একের পর এক শিক্ষা ও এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বিশাল ভূমিকা পালন করেন। আর এইভাবে এই জমিদারীর শেষ সময় চলে আসে ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের মধ্য দিয়ে। বোঝায় যাচ্ছে জমিদারি প্রথার দিক থেকে নড়াইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এই প্রশ্নের উত্তরটা পরিস্কার।

হাটবাড়িয়াজমিদার বাড়ি

আনুমানিক ১৯ শতকের প্রথমদিকে জমিদার জয় নারায়ণ রায়ের হাত ধরে এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। জয় নারায়ণ রায় নড়াইল জমিদার বংশের বংশধর ছিলেন। নড়াইল জমিদার বংশের গোড়াপত্তনকারী জমিদার কালী শঙ্কর রায়ের দুই পুত্রকে দুইভাগে জমিদারী ভাগ করে দেন। বড় ছেলে রাম নারায়ণ রায়কে নড়াইল জমিদার বাড়ি এবং ছোট ছেলে জয় নারায়ণ রায়কে হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি দেন। হাটবাড়িয়া জমিদার বংশের শেষ জমিদার ছিলেন জমিদার জিতেন্দ্রনাথ রায়। অনেকের কাছে এই জমিদার বাড়ি তার নামেই বেশ পরিচিত। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার আগেই এই জমিদার বংশধররা ভারতে পাড়ি জমান।

উজিরপুরেরাজা কেশবরায়ের বাড়ী

রাজা কেশব রায়ের বাড়ি নড়াইল জেলাধীন নড়াইল পৌরসভার উজিরপুরে। এই বাড়িটি সদর থেকে প্রায় ৮ কি.মি. দক্ষিণেঅবস্থিত উজিরপুরে নামক গ্রাম। এ গ্রামের মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ দিকে চলে যাওয়া নড়াইল-ফুলতলা পাকা সড়ক ও পূর্ব দিকগামী উজিরপুর-পিয়ারতলা পাকা সড়কের সংযোগস্থলে লাগোয়া উত্তর-পূর্ব কোণে জঙ্গলার্কীণ এক প্রাচীন টিবি । এ প্রাচীন  ঢিবিটি রাজা কেশব রায়ের বাড়ি হিসেবে পরিচিত। এ  ঢিবি থেকে প্রায় ৩০০ মিটার উত্তর-পূর্ব পাশ দিয়ে চিত্রা নদী প্রবাহমান রয়েছে।

স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায় যে, প্রায়৩০০ বছর আগে কেশব রায় নামক জনৈক রাজা এ বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। জানা যায় যে, ‘ভারতেরপশ্চিম বঙ্গের হুগলী থেকে রাজা কেশব রায় এখানে এসে বসতি গড়ে তোলেন এবং নির্মাণ করেন রাজবাড়ি। সম্ভবত জলোচ্ছাস বা ভূমিকম্পে মাটির নিচে এ রাজবাড়ি ডুবে যায়।

জানা যায় প্রায় ৩০-৩২ বছর পূর্বে মাটি খনন কালে ৭-৮ হাত মাটির নিচে পাকা দালানের ছাদ পরিদৃষ্ট হয়। জনৈক প্রকৌশলী পরীক্ষা করে বলেন যে, পাশাপাশিনয়টি কামরার অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়।

বর্তমানে এ রাজ বাড়ির ধ্বংসাবশেষের মাটির ঢিবি ছাড়া তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। প্রায় ২১০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮০ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট জঙ্গাকীর্ণ এ বাড়িটির উপরে কতিপয় স্থানীয় লোকজন বসতি স্থাপন করে বসবাস করে। এ বাড়িতে বিদ্যমান উচুঁ  ঢিবিটি পার্শ্ববতী সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১.৮০ মিটার উচুঁ। সরেজমিনে পরিদর্শনকালে এ বাড়িতে ব্যবহৃত ফুল ও লতাপাতার অলংকৃত পোড়ামাটির ইট ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এই জেলায় যেতে চাইলে কি করবেন জেনে নিন

খুলনা বিভাগে অবস্থিত নড়াইল জেলার উত্তরে মাগুরা জেলা, দক্ষিনেখুলনা জেলা, পূর্বেফরিদপুর জেলা এবং গোপালগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে যশোর জেলা অবস্থিত। নড়াইল জেলার প্রধান নদীগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ মধুমতি নদী, নবগঙ্গানদী, ভৈরবনদী, চিত্রানদী, এবংকাজলা নদী।

ঢাকা থেকে সড়কপথে বাসে করে প্রায় ৫ ঘণ্টায় আপনি নড়াইলে পৌছাতে পারবেন। সড়কের অবস্থা খুবই ভাল হওয়ায় যাত্রাপথে আপনার মোটেও কষ্ট হবে না বরং আপনি পুরো যাত্রাপথই উপভোগ করবেন।

ঢাকা ছাড়াও খুলনা অথবা রাজশাহী থেকেও আপনি নড়াইলে আসতে পারবেন তবে এই ক্ষেত্রে আপনার সময় বেশি লাগবে।

বন্ধুরা আমরা তাহলে জানতে পারলাম নড়াইল জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত। আপনার ভাল লাগলেই আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক। সাথেই থাকবেন পরবর্তী আর্টিকেরটি পড়ার জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *