ভয়ঙ্কর হলেও বাজপাখির সাথে জেলের বন্ধুত্ব

দেশের কথা বরিশাল লাইফষ্টাইল

ভালোবাসার ভাষা কে না বুঝে, শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ, বন্যপ্রানী, গৃহপালিত পশু সবাই ভালবাসার টান বোঝে। আর সে জন্যই গৃহের অন্যান্য সদস্যদের মতোই হয়ে উঠে কিছু কিছু পোষ্যপ্রানী। শুধু মানুষ নয় বন্য প্রাণীও বোঝে কে তার শত্রু-মিত্র। কে তাকে ভালোবাসে। ভালবাসার মধ্যেই নিরাপত্তা, বিশ্বাস ও ভরসার জায়গা সৃষ্টি হয়ে। যা অদৃশ্য তবে মানুষিক শক্তিতে ভরপুর। এ ভালোবাসার বিশালতা কল্পনাকেও হার মানতে বাধ্য করে। যত্নে, মায়ায়, আদরে বেঁচে থাকে পশুপাখিও। তাদের মাঝে তৈরী হয় আনুগত্য। প্রকাশ পায় ইচ্ছাশক্তির। সাহস যোগায় মানুষের কাছাকাছি থাকবার। এরই প্রমাণ হলো কলাপাড়ার মহিপুর ইউনিয়নের বিপিনপুর গ্রামের কামাল পাহলানের সঙ্গে দুই বাজ পাখির সখ্যতায়। যা দেখে স্থানীয়রা বলছেন কামাল পাহলানের এ অর্জন একমাত্র ভালোবাসার কারনে।

অসীম ভালোবাসার সক্ষমতা নিয়ে মানুষের জন্ম হলেও অনেকে আবার এই ভালবাসাকে অবজ্ঞা করে যান। আমাদের মাঝেই অনেকেই আছেন যারা প্রকৃত ভালবাসার স্বাদ থেকে বঞ্চিত। আবার এমন কিছু মানুষ আছেন যারা সর্বত্র ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে সদা প্রস্তুত। তাদের সেই আকুন্ঠ ভালোবাসায়, যত্নে আর তদারকিতে এখানও বেঁচে থাকে অনেক অসহায় ও অবহেলিত পশু-পাখিও।

একটি বাজ পাখি পড়ে ছিলো রাস্তায়। বোঝা যায় সে আঘাত পেয়েছে। পাখিটি দেখে কামাল পাহলান বাড়িতে নিয়ে আসেন। ঐ বাজপাখিটি ১৫ দিনের মত চিকিৎসার পড়ে সম্পুর্ণ সুস্থ না হলেও ছেড়ে উন্মুক্ত করে দেন কামাল পাহলান। পাখিটি উড়তে না পাড়লেও পায়ে হেঁটে ঐ আঙ্গিনা ছেড়ে যায়নি অন্য কোন দিকে। পাহলানের রেন্টিগাছের ডালেই বসে থাকতে দেখে আবারও নিয়ে আসেন বাড়ীতে। সেই থেকে শুরু ওর যত্ন। খাইয়ে দেওয়া, গোসল করানো ও তাঁর সাথে খেলাধুলা সবটাই সযত্নে করতে শুরু করেন পাহলান। জেলের পরিবারকে সুরক্ষাও অপরিচিত মানুষসহ কোন হিংস্র প্রাণী আসলে ও ডাকাডাকি শুরু করেন বাজপাখিটি। পাহলান ভালোবেসে তাঁর নাম রাখেন ‘ডায়মন’।

দির্ঘদিন ডায়মনের অপেক্ষায় পুরুষ বাজ পাখিটাও সারাদিন টাওয়ারে থাকলেও ৮/১০ দিন পড়ে ফিরে আসেন জেলের বাসায়, দুজনের খুনসুটি বেশ কয়েকঘন্টা এরপর আবার ফিরে যান টাওয়ারে৷ তবে পাহলানের ভাষ্যমতে, পুরুষ বাজ পাখিটির খাবারের ঝামেলা পোহাতে হয়না, ও বাহির থেকেই খেয়ে আসেন রোজ। শুধু ডায়মনের খাবারের জন্য মাছ ধরতে হয় প্রতিদিন পাহলানকে।

সারাদিন বাড়ীর অঙ্গিনায় থাকলেও সন্ধা নামার সাথেই ফিরে আসেন ঘরের দরজায়। খাচ্ছেন বাড়ীর মানুষের সাথেই। হিংস্র প্রাণীর এমন বন্ধুতের ঘটনায় রীতিমত সারা ফেলেছে এলাকায় দেখতে ভীড় জমান অনেকেই।

প্রতিবেশীরা বলেন, কামাল পাহলানের ছোট বেলা থেকেই পশুপাখি পালার শখ। কবুতর থেকে শুরু করে শালিক ঘুঘু সহ বিড়াল পুষতেন তিনি। তার পাখির প্রতি ভালোবাসার প্রতিদান দিচ্ছেন পালিত পাখিটা। আমরাও উপভোগ করছি এমন দৃশ্য।

স্থানীয়রা বলেন, যেখানে মানুষ মানুষকে ভালোবাসলে প্রতিদান নেই সেখানে এমন একটা হিংস্র পাখির (বাজপাখি) সাথে কামাল পাহলানের এমন একটা ভাব সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। সময় পেলেই দেখতে আসি তাদেরকে। কামাল পাহলান শতব্যস্ত থাকলেও খোঁজ খবর রাখেন পাখিটির।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *