সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের এক নেতার অত্যাচারে নিজ গ্রামের ভিটেবাড়িতে যেতে পারছেন না এক সরকারী কর্মজীবী স্কুল শিক্ষিকা। ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষিকা কামরুন্নাহারের জমি দখল করে বাড়ি তৈরী করছেন হাটিকুমরুল ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন। নির্মাণকাজে আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ক্ষমতার জোরে আদালতের রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। নিজের সম্পদ রক্ষায় গ্রাম্য সালিস থেকে শুরু করে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে ধর্ন্না দিয়েও কোন প্রতিকার মেলেনি আব্দুল হান্নান-কামরুন্নাহার দম্পতির। নিজেদের বসতভিটা রক্ষায় সরকারের উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। অভিযোগ রয়েছে শ্রমীকনেতা বেলাল হোসেন নিজ এলাকায় ক্ষমতার অপব্যাবহার করে অন্যের জমি দখল করে হুমকি ও মারধর করে আসছে।এমনকি শ্রমিকলীগ নেতা হওয়ার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাবে অবৈধ পরিবহন ব্যবসাসহ চাদাবাজী করে আসছে।
সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ইউনিয়নের বগুড়া- পাবনা মহাসড়কে গিয়ে দেখাযায়, ২০১৬ সালে বাহেড় আলী প্রামানিকের ছেলে ও মেয়েদের কাছ থেকে ৫ ডিসিমাল জমি কেনেন আব্দুল হান্নানের স্ত্রী সরকারী স্কূল শিক্ষিকা কামরুন্নাহার। চাকরীর জন্য তিনি এবং তার স্বামী বর্তমানে ঢাকায় অবস্থানরত। অবসর জীবনে ঠিকানা গড়ার জন্য এই জমি কেনেন তারা। এরপর ২০২২ সালে তার প্রতিবেশি ইউনিয়ন শ্রমিকলীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন তার জায়গার পাশে বাড়ি নির্মানের কাজ শুরু করেন। এসময় উভয় পক্ষ তাদের জায়গা বুঝে নেয়। এসময় শিক্ষিকা চাকরীর সুবাদে বাইরে থাকায় সুযোগ বুঝে বেলাল হোসেন তার নিজের জায়গার সাথে শিক্ষিকার জায়গার ৩.৫০ ডিসিমাল অংশ জোর করে দখল করে বাড়ি নির্মনের কাজ শুরু করেন। এ সময় এই জায়গাতে থাকা বেশকিছু গাছপালা কেটে ফেলেন বেলাল হোসেন। এ ব্যাপারেও একটি মামলা দায়ের করেন শিক্ষিকা কামরুন্নাহার। পরে শিক্ষকা বাধা দিলে বেলাল ক্ষমতা প্রযোগ করে জোর করে নির্মান কাজ চালিয়ে যায়।
এসময় স্থানীয় চেয়ারম্যান ও গ্রামের মাতব্বররা এবিষয়ে একাধিক বার সালিশে বসলেও এর কোন কিনারা করতে পারেননি। পরে বাধ্য হয়ে ৩ এপ্রিল ২৩ইং তারিখে শিক্ষিকা উল্লাপাড়া সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার পর থেকেই বেলাল এই পরিবারকে প্রানে মারার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছে। এমনকি ভূক্তভোগিদের তাদের জায়গার কাছে আসতে দিচ্ছে না। আদালত এই মামলায় স্থাপনা না করার জন্য নির্দেশ দিলেও বেলাল হোসেন রাতের আধারে তার বাড়ি নির্মারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এঘটনায় একাধিক বার পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেন।
এদিকে গাছ কাটা মামলায় বেলাল হোসেন গ্রেফতার হন। জামিনে বের হয়ে তিনি হয়ে ওঠেন আরো বেপরোয়া। বিভিন্ন ভাবে আবারো তিনি মুঠোফোনে শিক্ষিকা পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন এই শিক্ষিকা।
এদিকে বেলাল হোসেনের প্রতিবেশী ও গ্রামবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘ সময় ধরে গ্রামবাসীকে নানাভাবে হয়রানি করে আসছে বেলাল হোসেন। তার প্রতিবেশী আব্দুল কাইয়ুম সরকার জানান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেলাল হোসেন জমি দখল থেকে শুরু করে নানা অনৈতিক কাজ করে থাকেন। কেউ কিছু বললে মারধর করে। প্রতিবেশী সাবিনা জানান, আগে থেকেই দেখে আসছি এটি কামরুন্নাহারের জমি কিন্তু বেলাল বাড়ি করার সময় জোর করে জমিতে স্থাপনা নির্মান করছে। প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক আরও জানান বেলালের বিরুদ্ধে কথা বললে দলের লোকজন নিয়ে এসে বাড়িতে হামলা করে। তাই ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করেন না।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা কামরুন্নাহার জানান, আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আমার জমিতে বাড়ি নির্মাণ করছেন বেলাল হোসেন। তাঁর সরকারি দলের ক্ষমতা থাকার কারণে আমরা কিছুই করতে পারছি না। উপরন্ত বারংবার সে আমাকে প্রানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে আসছে ও মামলা তুলে নিতে জোর প্রয়োগ করছে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসেন বলেন, নিয়ম অনুসারেই আমি আমার কাজ করছি। আদালতে হাজিরা দিয়ে নিজের পক্ষে কাগজপত্র জমা দিলেও আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান।
এ বিষয়ে হাটিকুমরুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেদায়েতুল আলম জানান, এ বিষয়ে একাধিকবার সালিশে বসা হয়েছে। কিন্তু সালিশ না মানার কারণে আমরা কিছু করতে পারিনি। এখন এটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এ বিষয়ে সলঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। কেউ যদি আদালতের নির্দেশ অমান্য করে আইনগতভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি সরকারের উচ্চমহল বিষয়টি নজরে এনে দ্রুত এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নেবে।