বুধবার, নভেম্বর ২০, ২০২৪
spot_img

হাতে সময় ১৮ দিন, শেখ হাসিনার অপশন মাত্র দুটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। ক্ষমতাচ্যুত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্শে শতাধিক মামলা হয়েছে। এরমধ্যে হত্যা মামলাই বেশি। গণহত্যার মামলা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতেও যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। কূটনৈতিক (লাল) পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় ভারত থেকে অন্য কোনো দেশে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে গেছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। ভারতের আইন অনুযায়ী বিনা ভিসায় শেখ হাসিনা সে দেশে ৪৫ দিন থাকতে পারবেন। এর মধ্যে কেটে গেছে ২৭ দিন, হাতে আছে আর ১৮ দিন।

এই অবস্থায় ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে দুটি পথ খোলা রয়েছে। হয় তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চাইবেন, নয়তো দেশে ফিরে আসবেন। এই মুহূর্তে আর কোনো অপশন নেই ৭৭ বছর বয়সী এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর হাতে।

ভারত এখন কী করবে, তারা কি শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেবে? যেমনটা দিয়েছিল ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর। ছয় বছর ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে আশ্রয়ে ছিলেন হাসিনা।

প্রশ্ন আসে উভয় সংকটে থাকা ভারত কি তাকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক তৈরি করবে? যে সম্পর্ক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরে এখন অনেক তিক্ততায় পরিণত হয়েছে! ভারতবিরোধী সেন্টিমেন্ট আগের থেকে অনেক অনেক বেশি এখন। বহির্বিশ্বেও ভারতের সামপ্রতিক তৎপরতা নিয়ে নানা প্রশ্ন দানা বাঁধছে।

ভারত কি শেখ হাসিনাকে প্রোটেকশন দেবে? এমন প্রশ্নের উত্তর মেলানো খুবই কঠিক ব্যাপার। পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনা এখন উদ্বাস্তু। অন্য কোনো দেশে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও তা খুবই কঠিন। চীন এবং ভারত হাসিনাকে নিয়ে বাজি ধরেছিল। দুটো দেশই হেরেছে। মাঝখানে জিতে গেছে অন্য একটি দেশ। চীন সতর্ক হয়ে গেছে। ভারত হাসিনাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখছে এখনো। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে।

দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো স্পষ্ট ধারণা দেননি। এই অবস্থায় হাসিনা যদি ভারতের রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসেন তখন তাদের নীতি কী হবে তা নিয়ে উভয় সংকটে প্রশাসন। রাজনৈতিক পণ্ডিতরা দ্বিধাবিভক্ত। হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে চাপ বাড়বে ভারতের উপর। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এরকমই একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন।

ভারতের উদ্বেগ সেভেন সিস্টার নিয়ে। হাসিনার জমানায় স্বস্তি এসেছে। প্রতি বিপ্লবের পথে গিয়ে যেটুকু অর্জন তা হারিয়ে যেতে পারে। এই আশঙ্কাও তাদের মধ্যে রয়েছে। তাদের ভয়, হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ দেখাতে গিয়ে চীনের আগমন ঘটে কিনা! সে নিয়েও তাদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তাছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা নীরবেই তাদের অবস্থান সুসংহত করেছে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় এমনই একজন যার সঙ্গে রয়েছে পৃথিবীর অধিকাংশ রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানের সরাসরি যোগাযোগ তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি যদি চান অন্তত একশ’টি দেশের সরকারপ্রধানের সঙ্গে যখন তখন কথা বলতে পারেন। এ কারণে ভারত সতর্ক ভাবেই পা ফেলছে।

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা নরেন্দ্র মোদির সরকারকে আবেগতাড়িত না হয়ে বাস্তব সিদ্ধান্তের পক্ষে মত দিয়েছেন। পরিবর্তিত এই অবস্থায় হাসিনার দেশে ফেরা ছাড়া আর কী বিকল্প রয়েছে? গণহত্যার অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হতে চলেছেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। কোনো গণতান্ত্রিক দেশ তাকে (শেখ হাসিনা) গ্রহণ করতে চাইবে না। সময় যত গড়াচ্ছে বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয়দের মনোভাবেও পরিবর্তন আসছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গেই ভারতের তেমন সুসম্পর্ক নেই। যা ছিল তা বাংলাদেশের সঙ্গেই। ভুল নীতিগত কৌশল গ্রহণ করে সে অবস্থানটুকু হারাতে চায় না ভারত। কোটা বিরোধী আন্দোলন হাসিনার ভবিষ্যৎ যেমন ফিকে করে দিয়েছে তেমনি বাংলাদেশে ভারতের অবস্থান অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ করে দেয়।

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ