ঠাকুরগাঁও জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
আমরা অনেকেই জানি না ঠাকুরগাঁও জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ? তবু মনে প্রশ্ন জাগে কেন নামকরণ করা হয়েছে ঠাকুরগাঁও, অন্য কোন কিছু তো হতে পারতো তাই না! আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানবো জানার ঠাকুরগাঁও জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত । আমরা জানি বাংলাদেশ ৬৪টি জেলা রয়েছে। তার মধ্যে এক অন্যতম জেলা ঠাকুরগাঁও।
এখন মূল প্রশ্নে আসা যাক, ঠাকুরগাঁও কিসের জন্য বিখ্যাত? ঠাকুরগাঁও জেলা সূর্যপুরী আমের জন্য বিখ্যাত দেশ জুড়ে। স্বাদ, গন্ধে অতুলনীয় সূর্যপুরী আম। এই আম ঠাকুরগাঁও অঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় ও খুবই বিখ্যাত। দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে বা অন্য কোনো জেলায় এই আম হয় না বললেই চলে। যার কারণেই সারা দেশ জুড়ে ঠাকুরগাঁও জেলা সূর্যপুরী আমের জন্য বিখ্যাত।
ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের মধ্যে ঠাকুরগাঁও একটি প্রশাসনিক জেলা। ঠাকুরগাঁও’র উত্তরে পঞ্চগড় , দক্ষিণে দিনাজপুর ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর জেলা, পূর্বে দিনাজপুর ও পঞ্চগড় এবং পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর দিনাজপুর অবস্থিত।
ঠাকুরগাঁও জেলার আয়তনের ১৮০৯.৫২ বর্গ কি. মি.। ঠাকুরগাঁও এর আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর । নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী বসবাসরত বাড়ির নাম ঠাকুরবাড়ি। কালের বিবর্তনে নামকরন করা হয় চক্রবর্তী বাড়ি/ ঠাকুরবাড়িকে নাম দেওয়া হয় ঠাকুরগাও । টাংগন নদী, শুক নদী/সোজ নদী ও সেনুয়া বিধৌত এই জনপদের একটি ঠাকুর পরিবার বসবাস করতো । কালের বিবর্তনে ‘ঠাকুর‘ নামানুসারে ঠাকুরগাঁও রাখা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার উপজেলা সমূহ
ঠাকুরগাঁওয়ের ৫টি উপজেলা ও ৫৩টি ইউনিয়ন রয়েছে সেগুলো হলো :
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা – ২১টি ইউনিয়ন রয়েছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা – ১০টি ইউনিয়ন রয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা – ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে।
রানীশংকৈল উপজেলা – ৮টি ইউনিয়ন রয়েছে।
হরিপুর উপজেলা – ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ঠাকুরগাঁও জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রয়েছে : ১টি বিশ্ববিদ্যালয়: (প্রস্তাবিত), মহাবিদ্যালয় ৪৬টি, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ – ১টি, ডিগ্রী কলেজ ১৮টি, ইন্টারমেডিয়েট কলেজ – ২৭টি, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট – ১টি, কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র– ০১টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়– ২৭৯টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়– ১৩৯টি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়– ৪১৯টি, মাদ্রাসা– ১৬৯টি, রেজিঃ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়– ৪৪৬টি, কমিউনিটি– ৪১টি,।
ঠাকুরগাঁও জেলার দর্শনীয় স্থান
ঠাকুরগাঁও জেলার কিছু বিশেষ দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যার কারণে ও ঠাকুরগাঁও জেলা বিখ্যাত। এগুলো মধ্যে উল্লেখেযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলো নাম-
প্রাচীন রাজধানীর চিহ্ন নেকমরদ
রানীশংকৈল উপজেলার ভবানন্দপুর গ্রামে খরস্রোতা কাইচা নদীর তীরে গড়ে উঠে প্রাচীন রাজধানীর চিহ্ন নেকমরদ।
জামালপুর জামে মসজিদ
জামালপুর জামে মসজিদ ঠাকুরগাও জেলায় অবস্থিত। জমিদারবাড়ি জামালপুর জামে মসজিদ নামে পরিচিত।
১৮৬২ সালে এই জমিদারবাড়ির ভিত্তি স্থাপন করে। ১৮৬৭ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। বড় আকৃতির তিনটি গম্বুজ, মিনার উচ্চতা প্রায় ৩৫ ফুট, জানালা দুটি, দরজা তিনটি ও কুলুঙ্গি দুটি আছে।
ঢোলহাট মন্দির
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ঢোলার হাট মন্দির অবস্থিত। ঢোলার হাট মন্দির একটি প্রাচীন মন্দির। ঢোলহাট মন্দিরটি একটি লম্বা প্রাচীন উঁচু গোলাকার এক কক্ষের মন্দির ।এই মন্দিরে বাছুর দেবতার প্রাচীন মূর্তি আছে।
জগদল বিরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর রাজবাড়ী
জগদল রাজবাড়ি বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার জগদল নামক স্থানে অবস্থিত । ১৯০০ শতকে জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠ করা হয়।
অপরাজেয় ৭১ ভাস্কর্য
১৯৭৩ সালে মুক্তিযুদ্ধের মহান শহীদদের অসামান্য আত্মত্যাগের স্মরণে নির্মিত হয় অপরাজেয় ৭১ ভাস্কর্য।
হরিপুর রাজবাড়ী
হরিপুর রাজবাড়ি বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে ব্রিটিশ আমলে হরিপুর রাজবাড়ির কাজ শুরু করেন।
পীর শাহ নেকমরদের মাজার
রাণীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ স্থানটির মূল নাম ছিল ভবানন্দপুর। নেকমরদ নামে খ্যাতিমান এবং তার নাম অনুসারেই ভবানন্দপুর কালের বিবর্তনে নেকমরদ নামে পরিচিতি লাভ করে।
শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া
ঠাকুরগাঁও উপজেলার পশ্চিমে ভাউলারহাটের নিকটে শালবনে শালবাড়ি মসজিদটি অবস্থিত।১২১৫ সালে এই শালবাড়ি মসজিদ ও ইমামবাড়া নির্মান করা হয়। শালবাড়ি মসজিদটি সংস্কারের ফলে মূল নকশায় বিপুল পরিবর্তন সাধিত হয়।
কূপ ও শিলালিপি
রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে গোরকুই নামের একটি গ্রাম অবস্থিত।
বাংলা গড়
বাংলা গড় ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলায় অবস্থিত। দৈর্ঘ্য হবে ১ কিলোমিটারের চেয়ে কিছু বেশি, চওড়া প্রায় ১২ মিটার।
ঠাকুরগাঁও জেলার নদ–নদী
ঠাকুরগাঁওয়ে অনেকগুলো নদী রয়েছে সেগুলো হচ্ছে :
টাঙ্গন নদী, ছোট ঢেপা নদী, কুলিক নদী, পুনর্ভবা নদী, তালমা নদী, পাথরাজ নদী, কাহালাই নদী, তীরনই নদী, নাগর নদী, তিমাই নদী, এবং নোনা নদী।
এছাড়াও আছে শুক নদী, ছোট সেনুয়া নদী, আমনদামন নদী, লাচ্ছি নদী এবং ভুল্লী নদী ইত্যাদি।
ঠাকুরগাঁওয়ের হাট–বাজার
ঠাকুরগাঁওয়ের প্রধান হাট–বাজার গুলো নিম্নে দেওয়া হলো:
শিবগঞ্জ বাজার, খোচাবাড়ী হাট, রুহিয়া রামনাথ হাট, গড়েয়া হাট, কালমেঘ হাট, যাদুরানী হাট, ফাড়াবাড়ী হাট, বেগুনবাড়ী হাট,কাতিহার হাট, লাহিড়ী হাট ইত্যাদি।
আশা করি আজকে এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। আমাদের সাথে থাকার অসংখ্য ধন্যবাদ।