গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
গাইবান্ধা জেলা বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশে ৬৪টি জেলা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম জেলা গাইবান্ধা। গাইবান্ধা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ?
এছাড়া গাইবান্ধা জেলা কিছু দর্শনীয় স্থানের জন্য ও বিখ্যাত। যা নিয়ে আমরা নিচে আলোচনা করেছি। আসা করি আপনাদের ভালো লাগবে। গাইবান্ধা কিসের জন্য বিখ্যাত? গাইবান্ধা জেলা মূলত রসমঞ্জরীর এর জন্য বিখ্যাত। রসমঞ্জরী গাইবান্ধা জেলার ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু এক মিষ্টির নাম। গাইবান্ধার রসমঞ্জরী মিষ্টির সুনাম সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভৌগলিক সীমানা জুড়ে গাইবান্ধার ৪দিকে কোন কোন জেলা অবস্থিত রয়েছে
গাইবান্ধার উত্তরে কুড়িগ্রাম ও রংপুর দক্ষিনে বগুড়া ও জয়পুরহাট পূর্বে জামালপুর,তিস্তা ও যমুনা নদী এবং পশ্চিমে দিনাজপু,রংপুর ও জয়পুরহাট জেলা।
গাইবান্ধা জেলার ইতিহাস
গাইবান্ধা জেলার নামকরণ হলো যেভাবে: গোবিন্দগঞ্জ এলাকায় বিশাল রাজা রাজধানী ছিল ।কথিত আছে প্রায় ৫২০০ বছর আগে সেই রাজার ৬০ হাজার গাভী ছিল । সেই গাভী বান্ধার জায়গার নামে নামকরন করা হয় গাইবান্ধা জেলা।
গাইবান্ধা জেলার উপজেলা সমূহ
গাইবান্ধা জেলা ৭টি উপজেলা রয়েছে। গাইবান্ধা সদর উপজেলা, সাদুল্লাপুর উপজেলা, ফুলছড়ি উপজেলা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা, পলাশবাড়ী উপজেলা, সাঘাটা উপজেলা এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলা। আয়তনের দিক থেকে গাইবান্ধা জেলা ২,১৭৯.২৭ বর্গকিমি (৮৪১.৪২ বর্গমাইল)
গাইবান্ধা দর্শনীয় স্থান সমূহ
নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ী
এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ী , যা বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা নামক এলাকায় অবস্থিত। তুলসী লাহোরী ছিলেন এই নলডাঙ্গার জমিদার বাড়ীর জমিদার ।
বর্ধনকুঠি
বর্ধন কুঠির প্রাচীন ঐতিহাসিক স্থানের নাম ছিল বর্ধন কোট। বর্ধন কুঠি গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত এটি একটি অন্যতম ঐতিহাসিক স্থান । প্রাচীন কালে একজন বর্ধন নামের শক্তিধর নরপতি বসবাসরত ছিলেন।বর্ধনের নামানুসারে কালের বিবর্তনের এই বর্ধন কুঠির নাম রাখা হয়।
বালাসী ঘাট
বালাসী ঘাট হলো একটি নৌবন্দর ও দর্শনীয় স্থান। বাংলাদেশে গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলায় বালাসী ৰঘাট অবস্থিত। যমুনা নদীর নাব্যতা সঙ্কটের কারণে তিস্তা ও বালসী ঘাটে ফেরি সেবাটি ১৯৯০ সালের পরে স্থানান্তর করা হয় । ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের রেল যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৩৮ সালে রেল ফেরির সার্ভিস চালু হয় যমুনা নদীতে। মূলত এই ঘাট নৌবন্দরে দেশের বিভিন্ন স্থানে এমনকি বিদেশে ও পন্য পরিবহন করা হয়।
রাজা বিরাট প্রাসাদ
বিরাট রাজার ঢিবি প্রাচীন কালে এটি দুর্গনগরী ছিল। বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের অবস্থিত বিরাট রাজার ঢিবি। বিরাট নগর নামে পরিচিত। প্রাচীনকীর্তির ধ্বংসাবশেষ এখন ঢিবিরূপে আছে। রাজাহার ইউনিয়নের বিরাট নগরীর প্রত্তত্ত্ব নিদর্শন।
প্রাচীন মাস্তা মসজিদ
প্রাচীন মাস্তা মসজিদ রংপুর বিভাগের গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার প্রাচীনতম মসজিদ অবস্থিত। জানালা বিহীন প্রাচীন মাস্তা মসজিদের ৩টি দরজা, তিনটি গম্বুজ, ৪কোনে ৪টি স্তম্ভ ও দৈর্ঘ্য ৩৫ ফুট এবং প্রস্ত ১৬ ফুট রয়েছে।
ড্রীমল্যান্ড
গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলা ড্রীমল্যান্ড পার্ক অবস্থিত। ১৭ একর জমিতে ১৯৯৫ সালে গাইবান্ধা জেলার অন্যতম এই বিনোদন কেন্দ্রটি নির্মাণ করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রশিদুন্নবী চাঁদ।
পাকড়িয়া বিল
গাইবান্ধা জেলার অন্তর্গত সাদুল্লাপুর উপজেলায় পাকড়িয়া বিল অবস্থিত। পাকড়িয়া বিল গাইবান্ধা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিল।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার
গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার অবস্থিত। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার’র ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার নির্মাণে প্রায় ২বছর সময় লেগেছে। এর আনুমানি খরচ হল ৮ কোটি টাকা ,২০১৪-১৬ সালের শ্রেষ্ঠ স্থাপন করা হয়েছে।
তিস্তা নদী
তিস্তা নদী বাংলাদেশ ভারত একটি আন্তসীমান্তে নদী। এই নদীর বাংলা নামনুসারে নাম এসেছে ত্রিস্রোতা বা তিন প্রবাহ থেকে। চিতামু হ্রদ সিকিম হিমালয়ের ৭,২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত । চিতামু হ্রদ থেকে এই তিস্তা নদীর জন্ম হয়েছে। ১৭৮৭ খ্রিষ্টাব্দের অতিবৃষ্টি একটি ব্যাপক বন্যার সৃষ্টিতে এই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করে গাইবান্ধা জেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত হয়ে চিলমারী নদীবন্দরের দক্ষিণে ব্রহ্মপুত্র নদে পতিত হয়।
বাঙালি নদী
বাঙালি নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ৩ জেলার নদী গাইবান্ধা, বগুড়া এবং সিরাজগঞ্জ জেলার একটি নদী। বাঙালি নদীর দৈর্ঘ্য ১৮৩ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ১৪৩ মিটার। পাউবো” কর্তৃক পাথরাজ নদীর প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাঙালি নদী নং ৭৯।
গাইবান্ধা জেলার নদ-নদী
ব্রহ্মপুত্র নদ, তিস্তা নদী, যমুনা, ঘাঘট ও বাঙালি নদী ।
গাইবান্ধা জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
কলেজ -১০টি, স্কুল এন্ড কলেজ – ০৪টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় – ৫৫টি, সিনিয়র মাদ্রাসা – ০৪টি, দাখিল মাদ্রাসা – ১৬টি, এবতেদায়ী মাদ্রাসা – ১৬টি, নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় – ০৮টি, প্রাথমিক বিদ্যালয় – ১৩৬টি ও রেজিষ্টার্ড-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় – ৬১টি।
বন্ধুরা আসা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। আসা করি আপনারা জানতে পেরেছেন গাইবান্ধা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? আমাদের সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।