সবারকাছে কিশোরগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
নামশুনলেই অনেক কিছু মনে পড়ে, তবে মনের ভেতর সামান্য হলেও আচরকাটা বিষয়গুলো কেউ কি কখোন ভুলতে পারে? পারেনা জানি, তাইতো আমাদের এবারের আয়োজন দেশের হাওর অঞ্চলের একটি জেলা কিশোরগঞ্জ নিয়ে। চলুন বন্ধুরা আমরা জেনে নিই এই জেলাটি কিসের জন্য বিখ্যাত ও কেনই বা সবার কাছে এত সমাদৃত, গ্রহনযোগ্য হয়ে উঠেছে।
বলাযায় দেশের প্রায় সকল জেলাই কোন না কোন কারনে খ্যাতি অর্জন করেছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে হাওর অঞ্চলীয় জেলা কিশোরগঞ্জকে প্রকৃতি নিজেই এক অনন্য রুপ দিয়েছে। যা কিনা ভ্রমনপিপাসু মানুষকে সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে।
সাধারণত বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলা বালিশ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান এর জন্য কিশোরগঞ্জ জেলা বিখ্যাত। ( kishoreganj kiser jonno bikkhato )
জেলার অবস্থান
ভৌগলিক অবস্থান বলতে গেলে বৃহত্তর ঢাকা বিভাগের অর্ন্তগত ও দেশের মধ্যাঞ্চলীয় জেলা এটি। যার পশ্চিমে ময়মনসিংহ, পূর্বে সুনামগঞ্জ, হবীগঞ্জ, সবোর্ত্তরে নেত্রকোণা এবং দক্ষিণে নরসিংদী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অবস্থিত। আয়তনের দিক থেকে জেলাটি প্রায় ২৬৮৮ বর্গ কি:মি:। ১৬ টি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলার শিক্ষার হারও কিন্তু কম নয়। দেশের সবোর্চ্চ পদমর্যাদায় অধিষ্ঠিত বর্তমান রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ’র বাড়িও কিন্তু এই জেলাতেই।
কিশোরগঞ্জ জেলার মধ্যে বাংলাদেশের কিছু বিখ্যাত স্থান ও কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ এর বিখ্যাত স্থান ও কিশোরগঞ্জ এর দর্শনীয় স্থান গুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো-
দিল্লির আখড়া
দিল্লিরআখড়া ও হিজল গাছগুলোকে কেন্দ্র করে এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে অনেক রহস্যময় সব গল্প। গা ছমছম করা কাহিনীতে ভরপুর এই জেলার উল্লেখযোগ্য দিল্লির আখড়া। প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর আগে এলাকাটিঝোপ জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল। চতুর্দিকে ছিল নদী বেষ্টিত। ফলে এলাকটিকে মনে হতো দ্বীপের মত।
আখড়ার৩৭২ একর জমিতে এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অদ্ভুত আকৃতির কয়েক হাজার হিজল গাছ। যা দূর দূরান্তের আগন্তুককে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকে। সেই থেকে আখড়াটিকে‘দিল্লির আখড়া’ নামে পরিচিতি হয়ে আসছে।
সম্রাটজাহাঙ্গীর১২১২ সালে আখড়ার নামে একটি তামার পাত্রে উক্ত জমি লিখে দেন। পরে ১৩৭০ সালে ডাকাতরা এই পাত্রটি নিয়ে যায়। দিল্লির আখড়ায় প্রতি বছর ৮ চৈত্র মেলা বসে। এই মেলাকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলের মানুষ উৎসবে মেতে উঠে ও নিজের সাধ্য অনুযায়ী ।
চন্দ্রাবতী মন্দির
মূলতএটি একটি শিবমন্দির। চন্দ্রাবতী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম বাঙ্গালী মহিলা কবি। দেশের ইতিহাসে তার চেয়ে আগে আর কোন কবির জন্ম হয়নি। কিশোরগঞ্জ জেলায় এটিই বাংলা সংস্কৃতিতে অনন্য স্থাপত্যশিল্প। এটি দেশের প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর কর্তৃক তালিকাভুক্ত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এই মন্দিরটি কিশোরগঞ্জ সদরের মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে অবস্থিত।
ভৈরব সেতু
ভৈরবসেতুটি কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব ও আশুগঞ্জ উপজেলার মাঝে মেঘনা নদীর উপর অবস্থিত দৃষ্টিনন্দন একটি রেলওয়ে সেতু। একই জায়গায় পাশাপাশি দুটি সেতু পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষন করে সবসময়ই।
শোলাকিয়া ঈদগাহময়দান
বাংলাদেশতথা ভারতীয় উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান (Sholakia Eidgah) এই কিশোরগঞ্জ জেলায়। প্রতিবছরে অনুষ্ঠিত হওয়া দুই ঈদের জামাতে প্রায় ৩ লাখের বেশি মুসুল্লি একসাথে নামাজ আদায় করেন।
এতবড়এলাকায় নামাজের আকামত শুনতে সমস্যর কথা ভেবে নামাজ শুরুর আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির শব্দে সবাইকে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য সঙ্কেত দেওয়া হয়। শহরের পূর্ব দিকে নরসুন্দা নদীর তীরে এই ইদগাহ মাঠের অবস্থান।
১৮২৮সালে নরসুন্দা নদীর তীরে ঈদের জামাতের আয়োজন করেন সুফি সৈয়দ আহমেদ নিজেই।
নিকলী হাওর
কিশোরগঞ্জজেলা যার জন্য শ্রেষ্ঠত্বের সম্মান পায় তার নাম নিকলী হাওর। বলা বাহুল্য, দেশের এমন কেউ নেই যে এই নাম না শুনেছেন। হাওর বলতেই জিভে জল চলে আসে মাছের কারনে। দেশের অসংখ্য হাওরের মাঝে এই নিকলী হাওরের কথা উঠলেই মনে হয় আরও একবার ঘুড়ে আসি সেই প্রাণচঞ্চল মুহ্যমান প্রকৃতির সান্নিধ্যে। কিশোরগঞ্জ সদর থেকে ২৭ কিমি দুরে অবস্থি এই হাওরের স্বচ্ছ পানিতে দ্বীপের মতো ভেসে থাকা ছোট ছোট গ্রাম, স্বচ্ছ জলের বুকে খেলা করা মাছের সারি আর জেলেদের মাছ ধরার ব্যস্ততা দেখলেই মন জুড়িয়ে যাবে।
কিশোরগঞ্জ বিখ্যাত মানুষ
শিল্পাচার্যজয়নুল আবেদীনের জন্মনেয়া এই জেলায় সত্যজিত রায়, অভিনেতা– ইলিয়াস কাঞ্চন, শিল্পপতি :আলহাজ্ব জহুরুল ইসলাম(শিল্প উদ্যোক্তা ), শিক্ষাবিদ –ড. আলাউদ্দিন, আতাউর রহমান খান, ওসমান গণি, শাহ আব্দুল হান্নানের মতো মানুষের জন্ম। তাই গর্বের সাথে মাথা উচু করে আজও দেশসহ বিদেশের মাটিতে টিকে আছে এই জেলাটি।
আজকে আপনাদের সাথে এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি কিশোরগঞ্জ কিসের জন্য বিখ্যাত এবং কিশোরগঞ্জ জেলা সম্পর্কে কিছু তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।আসা করি আমাদের আজকের আর্টিকেল খুবই ভালো লেগেছে ও আপনাদের কিছুটা হলেও উপকারে এসেছে। আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।