মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
মাগুরা দেশের অন্যতম একটি জেলা। আমাদের অনেকেই মনে প্রশ্ন জাগতে পারে মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত?
দেশে প্রতিটি জেলাতেই কম বেশি নদী আছেই। সেই দিক থেকে বলা যায় মাগুরা জেলাতেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এই জেলাতে রয়েছে নবগঙ্গানদী, কুমার নদী, গড়াই নদী, মধুমতী নদী, চিত্রা নদী ও ফটকী নদী। এসব নদীর নাম শুনলেই নিজের কাছে কেমন যেন নৌভ্রমনের কথা মনে পড়ে যায়। নদীমাতৃক দেশে আমাদের বসবাস তাই নদীর টানে নৌকার কাছে মন ছুটে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। এই জেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া মধুমতি নদীটি প্রবহমান গড়াই নদী হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। মধুমতি নদীটি খুব বেশি আলোচিত হলেও নদীর মা হিসেবে গড়াই কিন্তু শ্রেষ্ঠত্বের দাবিদার।
যাই হোক বন্ধুরা, এই মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত আজ আমরা সেটা নিয়ে আলোচনা করবো। ভেবে নিতে পারেন এটা আমাদের জানার প্রচেষ্টা। এই দেশের নাগরিক হয়ে যদি এই দেশ সম্পর্কে জানতে না পারি তাহলে সেটাই হবে আপনার আমার বড় ব্যর্থতা।
মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
মাগুরা জেলা বর্তমানে বাংলাদেশে রসোমালাই ও মধুমতি নদীর জন্য বিখ্যাত। মাগুরা জেলা আমাদের দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। জেলাটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত একটি জেলা। আয়তন প্রায় ১০৪৮.৬১ বর্গ কি :মি:। এ জেলার পশ্চিমে ঝিনাইদহ, পূর্বে ফরিদপুর, দক্ষিণে যশোর ও নড়াইল, এবং উত্তরে রাজবাড়ী জেলা অবস্থিত। মাগুরাকে বাংলাদেশের লেবু ও কাচামরিচের রাজধানী বলা হয়ে থাকে । উপমহাদেশের মধ্য বর্তমানে মাগুরাতে বাংলাদেশের সবথেকে বড় পূজা হয়ে থাকে ।
মাগুরা জেলার দর্শনীয় স্থান
বিভিন্ন আকর্ষনীয় দর্শনীয় স্থানের ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে ভুমিকা পালন করে আছে ।বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানকে কেন্দ্র করে মাগুরা জেলার ইতিবাচক প্রভাব ফেলে । মাগুরা জেলার দশটি বিক্ষ্যাত দর্শনীয় স্থানসমুহের নাম নিম্নরুপঃ
সিদ্ধেশ্বরী মঠ
মাগুরা শহর হতে দেড় মাইল দূরে আঠারখাদা গ্রামে নবগঙ্গা নদীর তীরে সিদ্ধেশ্বরী মঠ অবস্থিত। এটি সু–প্রাচীন কালে মঠস্থল কালিকাতলা শ্মশান নামেও পরিচিত ছিলো। অতি প্রাচীন কাল হতে এই শ্মশানে একটি মঠ এবং সিদ্ধেশরী মাতার কালীমূর্তি প্রতিষ্ঠিত ছিল। তখনকার দিনে গভীর জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই স্থানটি ছিলো সন্যাসীদের তপস্যা স্থল। বহুকাল পরে যখন ব্রহ্মান্ডগিরি বা ব্রহ্মানন্দগিরি নলডাঙ্গার অধিশ্বর শ্রীমন্ত রায় বা রনবীর খাকে দীক্ষিত করেন, সেই সময় থেকে তিনি এই কালিকাপুর সিদ্ধেশরী মঠে এসে বসবাস শুরু করেন। শ্রীমন্তরায় দীক্ষা গুরু ব্রহ্মান্ডগিরির আদেশে পূর্ববর্তী মঠে সাধুগণের থাকার জন্য আশ্রম নির্মাণকরে দেন।
ভাতের ভিটা পুরাকীর্তি
ভাতের ভিটা ঢিবি মাগুরা জেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।এই স্থাপনাটি মাগুরা সদর উপজেলার দক্ষিণ–পশ্চিমে মঘি ইউনিয়নের ফটকী নদীর উত্তর তীরে টিলা গ্রামে অবস্থিত। সদর উপজেলা থেকে এই ঢিবির দূরত্ব ১২ কিলোমিটার।
রাজা সীতারাম রাজ–প্রাসাদ
মাগুরার প্রামাণ্য ইতিহাসের নায়ক ভূষণা তথা মহম্মদপুরের রাজা সীতারাম রায়। বাংলার যে সমস্ত খ্যাতনামা জমিদার দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের মাঝে মহম্মদপুরের রাজা সীতারাম রায় ছিলেন অন্যতম।
এই মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এমন প্রশ্নের উত্তরে অবশ্যই বলতে হবে মা ও মাটির টানের জন্য এই অঞ্চলের মানুষ বিখ্যাত।
মহম্মপুরের গৌরব রাজা সীতারাম রায় আজ না থকলেও তার অসংখ্যা কীর্তিকালের করাল গ্রাসকে উপেক্ষা করে তাকেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। তিনি নির্মাণ করেন মুহম্মদপুর দুর্গ, একাধিক প্রাসাদ, অসংখ্যা মন্দির ও দীঘি। যা মহম্মদপুর সমৃদ্ধির সময়ে মধুমতি নদী এই স্থানের প্রান্ত দিয়া প্রবাহিত ছিল একসময়।
১৮৩৬ খ্রীষ্টাব্দে মহামারীর ফলে মহম্মদপুর প্রায় বিরান হয়ে যায়। কথিত আছে, সীতারামের সৈন্য ছিল ২২০০ এবং যুদ্ধের সময় ছাড়া অন্য সময় তারা জনসাধারনের পানীয় জলের জন্য জলাশয় খনন খনন করতো।এদের মধ্যে প্রাচীন দুর্গের ধ্বংসাবশেষ,দোল মঞ্চ , সুখ সাগর ও কৃষ্ণসাগর নামে দীঘি। এছাড়াও রাম সাগর, রাজভবনের ধ্বংসাবশেষ সিংহদরওজা, মালখানা, তোষাখানা, কৃষ্ণজীর মন্দির , লক্ষ্মী নারায়ণের অষ্টকোন মন্দির এবং দশভুজা মন্দির ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
চন্ডীদাস এবং রজকিনীর ঐতিহাসিক ঘটনা
দেশের প্রাচীন ইতিহাস ঘেটে পাওয়া তথ্যমতে চন্ডীদাস ও রজকিনী একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এই ঘটনার মূল প্রানবন্ত বিষয় হচ্ছে “ঘাট”। যে ঘাটে চন্ডীদাস তার রজকিনীর জন্য বরশি ফেলে বসে থাকতেন। প্রেমের টানে পবিত্র মনের ভালোবাসার বন্ধন যে কেমন হতে পারে তা এরা শিখিয়ে গেছেন। প্রেমের এই অপূর্ব নির্দশনের ঘটনার কারনেও অনেকের ছুড়ে দেয়া প্রশ্ন মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত উত্তর চলে আসে। অনেকের ধারনা এই চণ্ডীদাস আর রজকিনীর প্রেমকাহিনী কোনো কিংবদন্তি নয়, এটি একটি সত্য ঘটনা যা এখানেই শুরু হয়েছিল। মাগুরা সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে শালিখা উপজেলার শতখালি ইউনিয়নের ধোপাখালী গ্রাম। চণ্ডীদাস–রজকিনীর স্মৃতিঘেরা ধোপাখালী গ্রামটা পাখ–পাখালির ডাকে ছায়া সুনিবিড় সত্যিকারের বাংলার গ্রাম। জনশ্রুতি আছে ১৪ শতকের শেষ ভাগের দিকের ঘটনা।
মাগুরা জেলার নামকরন
মূঘল যুগে মাগুরা জেলার নামকরন হলেও এর ব্যাখ্যা দেওয়া কঠিন ব্যাপার। জানা যায় যে, এক কালে সুন্দরবনের কাছাকাছি এই অঞ্চলে মগ জল দস্যুদের দারুণ উৎপাত ছিল। কুমার নদী ও নবগঙ্গার তীরে অবস্থিত বর্তমান মাগুরা শহরে ছিল তাদের আখড়া। নদী পথে তারা বর্গীদের মতো দস্যুপনা করতো। তাদের নাম থেকে নেওয়া মগরা থেকে’ মাগুরা’ হয়েছে। কোন ঐতিহাসিকের মতে মুঘল নবাব মুর্শিদকুলী খার আমলে মগদের অগ্রযাত্রাকে যেখানে প্রতিহত করে ঘুরিয়ে দেওয়া হত সেই স্থানটির নাম রাখা হত মগ–ঘুরা। মগ–ঘুরাই পরবর্তীতে মাগুরা হয়েছে। মাগুরা তথা যশোর– ফরিদপুর এলাকায় মগ– দস্যুদের অত্যাচার ও লুষ্ঠনের কাহিনী আজও ইতিহাসের এক বেদনাময় অধ্যায়। “ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এলো দেশে” প্রচলিত এই ছড়াটিও সে সময়ের প্রকৃত চিত্রতে তুলে ধরেছে। মুহম্মদপুরের রাজা সীতারাম রায় ও যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য মগ–বর্গী দমনে কার্যকর ভূমিকা রেখেছেন । বলা চলে যে দস্যুদের এই দুই রাজাই প্রতিহত ও পরাজিত করেন তারা । বহু মগ বর্গী সীতারামের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং সেনাবাহিনী ও রাজ কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ পেয়ে যান। এখনো মাগুরা শহরে তাদের নিবাসের ব্যবস্থাও করা হয় বলে জানা যায়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এমন প্রশ্নের জবাবে বলা যেতেই পারে নামকরণের দিক থেকেও মাগুরা জেলা বিখ্যাত।
উপরে উল্লেখিত বিশেষ স্থানসহ এই মাগুরা জেলাতে বিনোদন কেন্দ্রেরও অভাব নেই যার মাঝে আলোচিত গুলো তুলে ধরা হলো।
• গড়াই সেতু
• কবি ফররুখ আহমদ এর বাসস্থান
• বড়াল রাজার বাড়ির ধ্বংসাবশেষ
• শ্রীপুর জমিদার বাড়ি
• কবি কাজী কাদের নেওয়াজ এর বাড়ী
• বিড়াট রাজার বাড়ী
• তালখড়ি জমিদার বাড়ি
• ছান্দড়া জমিদার বাড়ি
• কাদিরপাড়া জমিদার বাড়িও লেংটা বাবার আখরা ইত্যাদি ।
বাবুখালী ঘোড়দৌড় মেলা
এই জেলাতে একটি ব্যতিক্রমদর্মী মেলার আয়োজন হয় প্রতি বছরই। যার নাম ঘোড়দৌড় মেলা। মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালীতে ১৬ই মাঘ মাসে ঘোড় দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে থাকে। আনুমানিক ১৮৯৮ সাল থেকে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়ে আসছে এ জেলাতে। এই প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে ৩ দিন ব্যাপী মেলার বিশেষ আয়োজন করা হয়ে থাকে। এখানে জারিগান, সারিগানসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। তাহলে কি বন্ধুরা? জানাতে পারলাম তো মাগুরা জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত।
আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের ভাল লাগলেই আমাদের প্রচেষ্টা স্বার্থক। নিয়মিত আমাদের সাথেই থাকুন। নতুন নতুন তথ্য নিয়ে আবার দেখা হবে।