হবিগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
হবিগঞ্জ বাংলাদেশের সিলেট বিভাগে অবস্থিত একটি এ ক্যাটাগরির প্রশাসনিক এলাকা । দৃষ্টিনন্দন, ঐতিহ্যবাহী এই প্রাচীন জনপদটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব এলাকায় অবস্থিত একটি জেলা ।
হবিগঞ্জ প্রত্যন্ত প্রাচীন জনপদ এবং আজ থেকে প্রায় কয়েক হাজার বছর আগেও এখানে মানুষের বসতি ছিল বলে ধারণা করা হয় । এবং আজকের আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করতে চলেছি হবিগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সে সম্পর্কে । তার পাশাপাশি হবিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থান এবং বিশেষ ব্যক্তিত্ব নিয়ে সাজানো হয়েছে আমাদের আজকের আর্টিকেল ।
হবিগঞ্জ জেলার ইতিহাস
প্রাগৈতিহাসিকবিদদের মতে আজ থেকে প্রায় কয়েক হাজার বছর পূর্বেও এখানে জনবসতি ছিল।প্রাগৈতিহাসিক বিষয় বস্তু নিয়ে গবেষণা করেন,তাদের মতে, হবিগঞ্জ এর আশপাশের হাওর এবং নদী-নালায় হস্তনির্মিত বিভিন্ন প্রাগৈতিহাসিক অস্ত্রের সন্ধান পাওয়া গেছে । এছাড়াও পাওয়া গেছে কিছু জীবাশ্ম ফসিল। এগুলো পর্যবেক্ষণ করে ধারণা করা হচ্ছে আজ থেকে প্রায় ২৫০০-৩০০০ বছর পূর্বে এখানে জনবসতি ছিল বা হয়ত সেই সময়টায় জনবসতি গড়ে উঠেছিল ।
যদিও পরবর্তীতে এ জনবসতি কি করে বিলীন হয়ে গিয়েছিল সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি । প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়ে থাকে মূলত পাহাড় ধসের ফলে তাদের মৃত্যু হয়েছে । যদিও এটি প্রমাণিত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয় ।
১৫ শতকে তৎকালীন হবিগঞ্জে মুঘল শাসক এবং বারভুইয়াদের মধ্যে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় ।
পরবর্তীতে ১৮৭৪ সালে ব্রিটিশ আমলে হবিগঞ্জকে মহাকুমার স্বীকৃতি দেয়া হয়। ১৯৮৪ সালে এটি পূর্ণাঙ্গ একটি জেলার স্বীকৃতি পায়।
হবিগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
হবিগঞ্জ জেলার মূলত বিখ্যাত এর দর্শনীয় স্থান এবং এখানে জন্মগ্রহণকারী বিশেষ ব্যক্তিত্বদের জন্য। তবে হবিগঞ্জ জেলা মূলত বিখ্যাত এখানকার চা বাগানের জন্য।
হবিগঞ্জ জেলায় ছোট বড় মিলিয়ে মোট ১২ টি চা বাগান রয়েছে। এই চা বাগান গুলো অত্যন্ত দৃষ্টি নন্দন, প্রতিবছর ব্যাপক পরিমাণ পর্যটক এখানকার চা বাগানের নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন হবিগঞ্জ।
এছাড়াও হবিগঞ্জ জেলা একটি বিশেষ কারণে বিখ্যাত। এমন একটি কারণ যদি আপনাকে খানিকটা হলেও অবাক করবে।
হবিগঞ্জ জেলার বিখ্যাত খাবার
হবিগঞ্জ জেলার আর দশটি সাধারণ মানুষ ভাত মাছ খেলে এখানকার একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী মূলত প্রধান খাবার হিসেবে “ছিকর” নামের একটি খাবার গ্রহণ করে থাকে।
অবাক করার বিষয় হল এটি এটেল মাটি দ্বারা নির্মিত একটি খাবার। প্রথমে স্বচ্ছ মিহি এটেল মাটি রোদে শুকোতে হয়। অতঃপর সেগুলোকে গরম তেলে ভাজা হয়। পরবর্তীতে সেগুলোকে বিস্কিটের মত টুকরো টুকরো করে পরিবেশন করা হয়।
অনেকেই হয়তো এই বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন তবে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের কাছে এটি একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার। যদিও সম্প্রতি সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতার কারণে অনেকেই এটিকে এড়িয়ে চলেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বেশ কয়েকবার এ বিষয়টি সম্পর্কে স্থানীয় মানুষদের সচেতন করলেও এখনো অনেকেই রয়েছেন যারা এই খাবারটি খেয়ে থাকেন।
এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যহানি ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে।
হবিগঞ্জ জেলা প্রথম শ্রেণীর চা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।
হবিগঞ্জ জেলার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান
যারা প্রশ্ন করে থাকেন সে হবিগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, তাদের অবশ্যই একবার হলেও হবিগঞ্জ ভ্রমণ করে যাওয়া উচিত।
মাধবপুর লেক
মাধবপুর লেক বাংলাদেশের বৃহৎ জলাশয়গুলির মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ মাধবপুর লেক ভ্রমণ করতে আসেন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিবেচিত।
শংকরপাশা শাহী মসজিদ
আজ থেকে প্রায় ৬০০ বছর আগে এই মসজিদটি তৎকালীন হবিগঞ্জে গড়ে উঠেছিল। অত্যন্ত নান্দনিক সৌন্দর্যকলা মণ্ডিত শংকর পাশের শাহী মসজিদ বাংলাদেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। প্রতিবছর প্রায় আনুমানিক ৭ লক্ষ পর্যটক এই মসজিদটি দেখতে আসেন এবং অনেকেই নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে প্রচুর টাকা-পয়সা সদকা করেন।
বিথাঙ্গল বড় আখড়া
আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর আগে এটি গড়ে উঠেছিল। এটি মূলত একটি বৌদ্ধবিহার। যদিও ১৩ শতকের দিকে এটি কোন এক কারণে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ১৮৩৫ সালে এটি পুনরায় সংস্কার করা হয়েছিল। যদিও ঠিক তার পাশে গড়ে তোলা হয়েছিল আরেকটি আখড়া।
পরবর্তীতে যখন এটিকে সংস্কার করা হয় তখন এর নামকরণ করা হয়েছিল বিথাঙ্গল বড় আখড়া।
দ্যা প্যালেস লাগজারিয়াস রিসোর্ট
এটি মূলত একটি রিসোর্ট যেখানে হবিগঞ্জ ভ্রমণকারী পর্যটকেরা আশ্রয় গ্রহণ করে অথবা রাত্রি যাপন করে।
আনুমানিক দের একর জায়গার উপর গড়ে উঠেছে দ্য প্যালেস লাগজারিয়াস রিসোর্ট।
গ্রিনল্যান্ড পার্ক
আনুমানিক প্রায় ২০ বিঘা জায়গার উপর গড়ে উঠেছে গ্রিনল্যান্ড পার্ক। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য গ্রীনল্যান্ড পার্ক হতে পারে অন্যতম একটি আকর্ষণ।
সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান
এটি মূলত বন্যপ্রাণীদের একটি অভয় অরণ্য, সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত একটি ইকোপার্ক। আপনি যদি হবিগঞ্জ ভ্রমণ করতে এসে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ভ্রমণ করে না যান তাহলে আপনার ভ্রমণ অপূর্ণ থেকে যাবে।
প্রতি বছর প্রায় আনুমানিক ৯-১০ লক্ষ মানুষ এটি ভ্রমণ করতে আসেন।
হবিগঞ্জ জেলার বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ
হবিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেছেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ এবং ধর্মীয় নেতা। তাদের মধ্যে অন্যতম কয়েকজন হলেন:
শাহ মোহাম্মদ কিবরিয়া
তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক অর্থমন্ত্রী। তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
মাওলানা সিরাজুল হোসেন
তিনি একজন বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ এবং রাজনীতিবিদ।
সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুজতবা আলী বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত কথা সাহিত্যিক। ১৯০৪ সালে তিনি হবিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।
কর্মজীবনে তিনি কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা করেন। পরবর্তীতে তিনি দেশে ফিরে বগুড়া আজিজুল হক কলেজের অধ্যাপকের দায়িত্ব লাভ করেন। তবে তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে লেখালেখি করার জন্য তিনি চাকরিচ্যুত হন।
মাওলানা আসাদ আলী চৌধুরী
তিনি বাংলাদেশের একজন খ্যাতিমান ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব এবং রাজনীতিবিদ। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক ছিলেন।
আমাদের আজকের আর্টিকেলে মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল, হবিগঞ্জ জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত সে সম্পর্কে। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলা কোন না কোন বৈশিষ্ট্য দ্বারা দেশবাসীর কাছে পরিচিত। সে কারণে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলাই বিশেষ এবং অনন্য। তবে প্রাকৃতিক নান্দনিকতা দেখতে হলে আপনাকে হবিগঞ্জ আসতেই হবে।