মঙ্গলবার, নভেম্বর ১৯, ২০২৪
spot_img

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত ?  নোয়াখালী দেশের দক্ষিনাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিভাগের অন্তর্ভুক্ত একটি জেলা৷ ১৮২১ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে এই জেলাটি আত্মপ্রকাশ করলেও, সেই সময় জেলাটির নাম ছিলো ভুলুয়া৷ অত:পর ১৮৬৮ সালে জেলাটির নাম পরিবর্তন করে “নোয়াখালী” করা হয়৷ 

 

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত
নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত

 

নোয়াখালী নামকরণ

 

“নোয়া” শব্দের অর্থ “নতুন” এবং “খালী” শব্দের অর্থ দাঁড়ায় খাল৷ নোয়াখালী’র পরিপূর্ণ অর্থ দাঁড়ায় “নতুন খাল”৷ 

 

১৭৭২ সালে সর্বপ্রথম ততকালীন ” ভুলুয়া”কে আধুনিক জেলা ব্যবস্থাপনার আওতায় এনেছিলেন ওয়ারেন হেস্টিংস। 

১৯৪৬ সালে নোয়াখালী-কোলকাতা দাঙার পর থেকে নোয়াখালী মূলত ভারতবর্ষে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলো৷ 

 

নোয়াখালী জেলার বর্তমান আয়তন ৩৮৫৬.৩৯ বর্গ কিলোমিটার৷ আয়তনের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের ১৮তম বৃহৎ জেলা৷ 

 

চলুন জেনে নেওয়া যাক নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত! তার পাশাপাশি থাকবে নোয়াখালী সম্পর্কে এমন কিছু মজার তথ্য যা আপনাকে চমকে দেবে! 

 

নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত

এক কথায় বলতে গেলে নোয়াখালী তাদের অঞ্চলের মানুষের ভাষা জন্য দেশ জুড়ে বিখ্যাত।

নোয়াখাইল্যা ভাষা

 

নোয়াখাইল্যা ভাষা

 

প্রত্যেকটি অঞ্চলের মানুষের আলাদা-আলাদা আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে৷ ছোট্ট একটি দেশের ভেতরে এতো বিচিত্র রকমের আঞ্চলিক ভাষা অন্য কোনো দেশে প্রচলিত রয়েছে কিনা তা জানা নেই৷ 

 

নোয়াখালী মূলত বিখ্যাত সেখানকার সাধারণ মানুষের আঞ্চলিক ভাষার কারণে,যা গোটা দেশব্যাপী বিখ্যাত! 

 

যদিও ভাষা নিয়ে মানুষের মধ্যে ঠাট্টা মসকরা কম হয় না৷ অনেক সময় আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়৷ তবুও নোয়াখালীর সাধারণ মানুষ তাদের আঞ্চলিক ভাষা নিয়ে গর্বিত! 

নোয়াখালীর বিখ্যাত ব্যক্তি

 

নোয়াখালীর বিখ্যাত ব্যক্তি

 

নোয়াখালীর বিঝ্যাত ব্যক্তি – দের দ্বারাই নোয়াখালী সমৃদ্ধশালী৷ নোয়াখালী জেলায় এমন কিছু বিশেষ ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ রয়েছে, যাদের নাম জানার পর নির্ঘাত বুঝতে পারবেন, নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত ! 

 

  • বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন- বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রাপ্ত মহান মুক্তিযোদ্ধা ও স্কোয়াড্রোন ইঞ্জিনিয়ার৷ ১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর তিনি অত্যন্ত নির্মমভাবে ঘাতকদের হাতে নিহত হন । পরবর্তীতে তাকে রূপসা নদীর তীরে সমাধিত করা হয়েছিল । 

  • ওয়ায়দুল কাদের – বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ,  বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমান সরকারের রেল,যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রী৷ তিনি সোত্তরের দশকে বাংলাদেশের অন্যতম ছাত্রনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন । 

  • শিরিন শারমিন চৌধুরী- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম মহিলা ও বর্তমান জাতীয় সংসদের স্পিকার৷ কর্মজীবনে তিনি একজন আইনজীবী হলেও পরবর্তীতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন । বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ তিনি । 

  • চিত্তরঞ্জন সাহা- খ্যাতনামা প্রকাশক এবং বাংলা একাডেমি কতৃক অনুষ্ঠিত অমর একুশে বই মেলার উদ্দ্যোক্তা৷ ১৯৫১ সালে তিনি চৌমুহনীতে একটি বইয়ের দোকান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন । পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের সাহিত্যসংশ্লিষ্ট মানুষের অত্যন্ত প্রিয়ভাজন এ পরিণত হন । 

  • মুনির চৌধুরী – বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শহিদ বুদ্ধিজীবী। ১৯৭১ সালের ১৪ ই নভেম্বর তিনি বিপথগামী ঘাতকদের হাতে অত্যন্ত নির্মমভাবে নিহত হন । 

  • এ টি এম শামসুজ্জামান – বিশিষ্ট খ্যাতনামা অভিনেতা,প্রযোজক। বাংলা চলচ্চিত্র কে সমৃদ্ধ করতে যে কয়জন ব্যক্তির সর্বাধিক ভূমিকা রয়েছে তার মধ্যে এটি এম শামসুজ্জামান একজন । তিনি এক হাজারেরও বেশি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন । তার অনবদ্য অভিনয় প্রত্যেকটি প্রজন্মকে আকৃষ্ট করে । 

  • শবনম বুবলি- অভিনেত্রী।জনপ্রিয় চলচ্চিত্র শিল্পী  শাকিব খানের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের জেরে  সম্প্রতি সময়ে তিনি বেশটি আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন। 

 

এছাড়াও আরো অনেক বিশিষ্ট ব্যাক্তি-বর্গদের জন্ম এই জেলায়! 

 

নোয়াখালী কি খাবারের জন্য বিখ্যাত- নোয়াখালী জেলার বিখ্যাত খাবার

 

নোয়াখালী জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত – এর খুবই সোজাসাপ্টা উত্তর হলো নোয়াখালী জেলা এর খাবারের জন্য বিখ্যাত৷ বিভিন্ন মুখরোচক খাবার, পিঠা ইত্যাদি খাবারের জন্য নোয়াখালীর নাম বিশ্বব্যাপী৷ এখানকার মানুষ অনেক ভোজনরসিক৷ 

জানা যায় স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস নাকি “ম্যারা পিঠা” খেতে কাজ ফেলে সুদূর নোয়াখালী চলে গিয়েছিলেন৷ 

নারিকেলের নাড়ু

 

নারিকেলের নাড়ু

 

 

দেশের দক্ষিনাঞ্চলে অবস্থান হওয়ায় নোয়াখালীতে নারিকেল বেশ ভালো জন্মে। সে কারণেই বোধ হয় নারিকেল দিয়ে নোয়াখালীর মানুষজন মজার মজার নাড়ু তৈরী করে । 

নোয়াখালীর মানুষজন একটি সংস্কার বিশ্বাস করেন । সেটি হল, যে কোনো ভালো কাজ সু-সম্পন্ন করার পর যদি নারিকেলের নাড়ু না খাওয়ানো হয়,তবে সেই  কাজের ফল বেশি দিন  স্থায়ী হয় না । 

ম্যারা পিঠ্যা

 

ম্যারা পিঠ্যা

 

 

ম্যারা পিঠা খুবই দুর্দান্ত একটি খাবার। দেখতে কিছুটা কোণাকার লাটিমের মতো। দেখতে যেমন সুন্দর,খেতেও তেমন অসম্ভব রকমের সুস্বাদু। 

মরিচ খোলা বা কলার পাতায় পাতুরি 

 

মরিচ খোলা বা কলার পাতায় পাতুরি

 

 

নদীনালা খালবিল থেকে সংগ্রহ করা ছোট ছোট মাছ সুন্দর মত বাছাই করে পেঁয়াজ-মরিচ সহ বিভিন্ন মসলা দিয়ে কলার পাতায় মুড়ে ফেলা হয়। এরপর ভাতের সাথে ভাপে বসিয়ে দেওয়া হয় । তৈরি করা হয়ে গেলে পরিবেশন করা হয় গরম গরম ধোঁয়া ওঠা ভাতের সবচেয়ে । 

মরিচ খোলা নোয়াখালী জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত খাবার । যে খাবারটি খেতে এবং খাবারের রেসিপি রপ্ত করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন ছুটে আসে । 

 

নোয়াখালীর দর্শনীয় স্থানসমূহ

নোয়াখালী জেলায় এতো দর্শনীয় স্থান রয়েছে যে,দর্শনীয় স্থানগুলি বুঝিয়ে দেয় নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত । 

 

  • নিঝুম দ্বীপ-নিঝুম দ্বীপের উৎপত্তি ঠিক কত সাল নাগাদ হয়েছিল সেই নিয়ে অনেকের মতবিরোধ রয়েছে । তবে ওসমান নামের একজন বাথানিয়া সর্বপ্রথম এই দ্বীপে বসতি গেড়েছিলেন বলে জানা যায়। 

  • কমলা রাণীর দীঘি-এই দীঘিটি খনন করেছিলেন তৎকালীন সময়ে স্থানীয় রাজা পদ্মনাভ । 

  • কল্যান্দী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির-বাংলাদেশের প্রাচীন দুর্গা মন্দির গুলোর মধ্যে অনেক বিখ্যাত । এটি নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলাতে অবস্থিত।

  • মাইজদী কোর্ট বিল্ডিং দীঘি-এটি নোয়াখালী জেলার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত 16 একর এর উপর গড়ে ওঠা একটি দেখি । 

  • কল্যান্দি জমিদার বাড়ি-আমিও জমিদার কল্যান্দীর সময়ের জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করা হয়েছিল বেশ জাঁকজমকভাবে।

  • গান্ধী আশ্রম ট্রাস্ট-১৯৪৭ সালে ২৯ শে জুলাই গান্ধীজী আশ্রম ট্রাস্ট গড়ে তুলেছিলেন। 

  • মহাত্মা গান্ধী জাদুঘর-উনিশশো সাতচল্লিশ সালে গান্ধীজী সর্ব প্রথম বারের মত নোয়াখালী জেলা এসেছিলেন । তার স্মৃতি রক্ষার্থে এখানে একটি জাদুঘর গড়ে তোলা হয়েছে । 

  • বজরা শাহী জামে মসজিদ-অনেক বিখ্যাত এবং ঐতিহাসিক একটি মসজিদ । 

  • স্বর্ণ দ্বীপ-ধারণা করা হয় এই দ্বীপের স্বর্ণা নামের একজন গোয়ালিনী বসবাস করতেন এবং তার নাম অনুসারে এই দ্বীপটির নাম করণ করা হয় স্বর্ণদ্বীপ। 

  • গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর, সোনাইমুড়ী-এটি সোনাইমুড়ীতে অবস্থিত ১১ একর জায়গার উপর গড়ে ওঠা একটি গ্রন্থাগার এবং একই সাথে   জাদুঘর । 

আজকে এই আর্টিকেল থেকে আপনারা নোয়াখালী কিসের জন্য বিখ্যাত তা বুঝতে পেরেছেন। আসা করি আপনাদের আর্টিকেলটি ভালো লেগেছে। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

আরো খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisement -spot_img

সর্বশেষ