চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত । Chandpur kiser jonno bikkhato
আমরা বাঙালি, মাছে-ভাতে বাঙালি হিসেবে আমাদের সুনাম সারা বিশ্ব জুড়ে। বাংলাদেশে ৬৪ টি জেলা রয়েছে। এই ৬৪ টি জেলার মধ্যে চাঁদপুর জেলা একটি অন্যতম জেলা। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা।
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত? এছাড়া অনেক সময় আপনাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে, চাঁদপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত । তাই আজকে এই আর্টিকেল থেকে আমরা চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। তার পাশাপাশি আমরা আরো জানবো, চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবার,চাঁদপুরের বিখ্যাত স্থান,চাঁদপুরের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম এবং চাঁদপুর দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে আলোচনা করবো এই আর্টিকেলে। আসা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত |
চাঁদপুর জেলা
চাঁদপুর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলা। এই চাঁদপুর জেলার মোট আয়তন ১,৭০৪.০৬ বর্গ কিলোমিটার। চাঁদপুর জেলার মোট জনসংখ্যা ২৬,৩৫,৭৪৮ জন ২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী। এর মধ্যে ১২,২৮,৭৭৪ জন পুরুষ আর ১৪,০৫,৬৮২ জন মহিলা।
চাঁদপুর জেলার পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থল অবস্থিত। এছাড়া বাংলাদেশের জাতীয় ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি” নামে ডাকা হয়।
চাঁদপুর জেলা আগে বৃহত্তর কুমিল্লার অংশ ছিল। চাঁদপুর কে জেলার হিসেবে ঘোষণা করা হয় ১৯৮৪ সালে। রাজধানী ঢাকা চাঁদপুরের ড্রাইভিং দূরত্ব 118 কিমি (প্রায়)। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় চাঁদপুর ২নং সেক্টরের অধীনে ছিল।
চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত
চাঁদপুর জেলা ইলিশ এর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া ও চাঁদপুরের মানুষ আতিথেয়তার জন্য বিখ্যাত ।
আমরা সবাই জানি ইলিশ সামুদ্রিক মাছ। ইলিশ মাছ তার জীবনের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ সমুদ্রে থাকে। কিন্তু ইলিশ মাছ প্রজননের সময় সমুদ্র ছেড়ে নদীর মোহনায় ডিম পাড়তে আসে। যা পদ্মা নদী ও মেঘনা নদীতে ডিম পাড়তে আসে। তাই চাঁদপুর জেলা কে ইলিশ মাছের অন্যতম প্রজনন অঞ্চল হিসেবে চাঁদপুরকে “ইলিশের বাড়ি ” নামেও ডাকা হয়। (Chandpur kiser jonno bikkhato )
চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবার
চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবার এর মধ্যে হলো চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার সুস্বাদু ক্ষীর যা এই অঞ্চলের মানুষের মুখে মুখে অনেক সুনাম রয়েছে। প্রাচীন ব্রিটিশ আমলে জমিদার ও ইংরেজদের খাবারের তালিকায় সবসময় এ ক্ষীর ছিল। তাই চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলার সুস্বাদু ক্ষীর চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবার গুলোর মধ্যে একটি।
চাঁদপুরের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম
চাঁদপুর জেলার অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্মস্থান। বর্তমান শিক্ষা মন্ত্রী জনাব ডাঃ দীপু মনি,জনাব ড. মহিউদ্দীন খান আলমগীর ( মাননীয় সংসদ সদস্য ),মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম ( মাননীয় সংসদ সদস্য), ডাঃ মাকসুদুল আালম বাসার, ডাক বিভাগের সাবেক মহাপরিচালক জনাব প্রবাস চন্দ্র সাহা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক – জনাব সুজিত রায় নন্দী। এছাড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী চাঁদপুরের কচুয়ার কৃতি সন্তান জনাব বিপ্লব কুমার দেব।
চাঁদপুর দর্শনীয় স্থান
চাঁদপুর দর্শনীয় স্থান অনেক করেছে। চাঁদপুর দর্শনীয় স্থান গুলো মধ্যে অন্যতম হলো- হযরত শাহরাস্তির মাজার,অঙ্গীকার ভাস্কর্য,তিন নদীর মোহনা (বড় স্টেশন),রূপসা জমিদার বাড়ি এবং হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদন।
হযরত শাহরাস্তির মাজার
চাঁদপুর জেলায় শাহরাস্তি উপজেলার শ্রীপুর গ্রামে ইসলামিক ঐতিহাসিক হযরত শাহরাস্তির মাজার (Hazrat Shahrasti Mazar) অবস্থিত। প্রাচীন দিল্লির সুলতান ফিরোজ শাহ্-র আমলে হযরত শাহ্ জালালের সাথে ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে এই উপমহাদেশে আসা ১২ জন বিখ্যাত আউলিয়ার মধ্যে হযরত শাহ্ রাস্তি ছিলেন অন্যতম।
তিনি বড় পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানী (রঃ) এর বংশধ ছিলেন। ঐতিহাসিকরা ধারণা করে, ১৩৫১ সালে বাংলাদেশে আসেন। পরবর্তীতে হযরত শাহ্ রাস্তি তাঁর নামানুসারেই শাহরাস্তি উপজেলার নামকরণ করা হয়। ইসলাম প্রচারে মহৎ হযরত শাহ্ রাস্তি ১৩৮৮ সালে চাঁদপুরের শ্রীপুর গ্রামেই মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর মৃত্যুর প্রায় সাড়ে তিনশ বছর পর সুবেদার শায়েস্তা খানের কন্যা, পরী বিবির আদেশে কাজী গোলাম রসূল তাঁর সমাধিকে ঘিরে মাজার নির্মাণ করেন। যা হযরত শাহরাস্তির মাজার নামে পরিচিত।
অঙ্গীকার ভাস্কর্য
চাঁদপুর জেলার শহরের মধ্যে, মুক্তিযোদ্ধা সড়কের পাশের লেকে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে প্রতি এই অঙ্গীকার ভাস্কর্য (Ongikar Monument) নির্মাণ করা হয়েছে। এই ভাস্কর্য ১৯৮৯ সালে চাঁদপুরের তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসএম শামছুল আলমের প্রচেষ্টায় দৃষ্টিনন্দন এই অঙ্গীকার ভাস্কর্যটি নির্মিত করা হয়।
তিন নদীর মোহনা – (বড় স্টেশন)
চাঁদপুর জেলা ঘুরতে এসে বড় স্টেশন (Boro Station) বা তিন নদীর মোহনা আসেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। চাঁদপুরে পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া এই তিন নদীর মিলনস্থলটি মোলহেড নামেও পরিচিতি লাভ করেছে। এই তিন নদীর মোহনায় সূর্যাস্থের দৃশ্য, ছোট ছোট নৌকার ভেসে চলা, নদীর কূলে পানি আঁচড়ে পড়ার শব্দ সারাজীবন মনে রাখার জন্য যথেষ্ঠ একজন দর্শনাথীর।
এছাড়া আমাদের ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় এই বড় ষ্টেশন এলাকায় পাকিস্তানী হানাদার কতৃক পরিচালিত টর্চার সেলে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তাই মহান শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সেই স্মৃতির উদ্দেশ্যে এখানে ‘রক্তধারা’ নামে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে।
রূপসা জমিদার বাড়ি
রূপসা জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা গ্রামে অবস্থিত একটি জমিদার বাড়ি। ধারণা করা যায়, ১৮ শতকের মাঝামাঝি সময়ে আহম্মদ রাজা ইংরেজ ব্রিটিশদের কাছ থেকে জমিদারি কিনে উক্ত জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেন। যা বর্তমানে ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে একটি। যা রূপসা জমিদার বাড়ি পরিচিত।
হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ
চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জে অবস্থিত সুন্দর শৈল্পিক কারুকার্যময় হাজীগঞ্জ ঐতিহাসিক বড় মসজিদটি যা হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ নামে পরিচিত। হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ আয়তনের দিক দিয়ে উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম মসজিদ। প্রায় ১৯৩১ খ্রিঃ নির্মিত করা হয়েছে এই মসজিদ। এছাড়া এই মসজিদটিকেই চাঁদপুর জেলার সবচেয়ে পুরোনো মসজিদ হিসেবে ধরা হয়।
এছাড়া ও চাঁদপুর জেলার আরো অনেক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যেমন- মোহনপুর পর্যটন কেন্দ্র,লোহাগড় মঠ,শপথ চত্বর,ষাটনল পর্যটন কেন্দ্র,রক্তধারা স্মৃতিসৌধ ইত্যাতি। এই চাঁদপুর দর্শনীয় স্থান গুলোর কারণেও চাঁদপুর জেলার দেশ জুড়ে বিখ্যাত।
চাঁদপুর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত
আজকে আপনাদের সাথে এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করেছি চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত ও চাঁদপুর জেলা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য। যেমন-চাঁদপুর দর্শনীয় স্থান,চাঁদপুরের বিখ্যাত খাবার এবং চাঁদপুরের বিখ্যাত ব্যক্তিদের নাম। আসা করি আপনার চাঁদপুর কিসের জন্য বিখ্যাত ও চাঁদপুর জেলা সম্পর্কে জানতে পেয়েছেন। আসা করি আমাদের আজকের এই আর্টিকেল টি খুবই ভালো লেগেছে ও আপনাদের উপকারে এসেছে। আমাদের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।